নূরুল কবীর: পাকিস্তানের পশ্চিমভিত্তিক অগণতান্ত্রিক শাসকশ্রেণির শাসন-নিপীড়ন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে ১৯৭১ সালে সংঘটিত একটি জনযুদ্ধের ভেতর দিয়ে উত্থিত বাংলাদেশের ঐতিহাসিক অঙ্গীকার ছিল ‘সাম্য, সামাজিক ন্যায়পরতা ও নাগরিকদের মানবিক মর্যাদা’ প্রতিষ্ঠার জন্য একটি ‘গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র’ গড়ে তোলা। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশের শাসকশ্রেণির বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের স্বৈরতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে, অর্ধশতাব্দীর বেশিকাল ধরে এখানে একটি যথার্থ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি, বরং এ দেশের শাসকশ্রেণির বিভিন্ন সংগঠন আপন আপন সংকীর্ণ স্বার্থে এখানে একটি শোষণ-নিপীড়নমূলক স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রের বিকাশ নিষ্পন্ন করেছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় যার নৃশংস রূপ আমরা প্রত্যক্ষ করেছি।
ইতিপূর্বে বিভিন্ন ব্যক্তি ও রাজনৈতিক সংগঠন ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ ও ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের’ ঐতিহাসিক অপরিহার্যতা নিয়ে কথা বলেছে। তবে বিগত গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে এই রাজনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের দাবি ও ন্যায্যতা বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের পাটাতনের ওপর প্রতিষ্ঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রদর্শন সম্পর্কে অস্বচ্ছ ধারণা ও কোনো কোনো উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রূপান্তর’ ও ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা গত ৯ মাসে ক্রমেই হ্রাস পেয়ে চলেছে। এসব উপদেষ্টার সহযোগিতায় বরং কোনো কোনো প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক শক্তির বিকাশের পথ প্রশস্ত হচ্ছে।