ঢাকা: স্থল গভীর নিম্নচাপ ধীরে ধীরে দুর্বল হলেও এর প্রভাবে এখনো দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ওপর দিয়ে ঝড়-বৃষ্টি বয়ে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও ৮০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যেতে পারে।



শুক্রবার (৩০ মে) এমন পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়াবিদ মো. শাহীনুল ইসলাম জানিয়েছেন, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং সিলেট অঞ্চলসমূহের ওপর দিয়ে দক্ষিণ/দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০-৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে দুই নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া দেশের অন্যত্র একই দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫-৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি/বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরসমূহকে এক নম্বর সতর্কতা সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এদিকে সাতক্ষীরা ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত গভীর স্থল নিম্নচাপটি উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে সরে গিয়ে বর্তমানে স্থল নিম্নচাপ আকারে আজ সকাল ৯টায় টাঙ্গাইল ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করেছে। এটি আরও উত্তর/উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে বৃষ্টি ঝরিয়ে ক্রমশ দুর্বল হতে পারে। স্থল নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।

এই অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।

বিভিন্ন জেলা উপজেলার খবর:

রাজধানী: রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার সকাল থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এর আগে বৃহস্পতিবার সারাদিন ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যায় ঢাকার বিভিন্ন সড়ক।

পাথরঘাটা (বরগুনা): বরগুনার পাথরঘাটায় জোয়ারের পানির তোরে বেড়িবাঁধ ভেঙে ছয় গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি পানিবন্দি রয়েছে।  

বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারে পানি ভেতরে ঢুকলেও ভাটায় এখনও নামেনি পানি। উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের হলতা নদীর মানিকখালী অংশে বাঁধ ভেঙে যায়।  

এদিকে গত দুদিন ধরে পাথরঘাটায় ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এখন্ পর্যন্ত ঝড়ো হাওয়ায় গাছপালা ও ঘরবাড়ির ক্ষতি হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে উপকূল জুড়ে রয়েছে আতঙ্ক। বিশেষ করে বলেশ্বর ও বিষখালী নদী সংলগ্ন বাসিন্দারা পড়েছেন বিপাকে।  

উপজেলার নাচনাপাড়া ইউনিয়নের মানিকখালী গ্রামের বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম জানান, বুধবার থেকেই পাথরঘাটায় বৃষ্টি ও জোয়ারের তোরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। নাচনাপাড়া হলতা নদীর বেড়িবাঁধ মানিকখালী অংশ ভেঙে ছয়টি গ্রামের বেশিরভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গ্রামগুলো হলো- মানিকখালী, নাচনাপাড়া, জ্ঞানপাড়া, উত্তর কাঠালতলী, কেরামতপুর ও পুটিমারা।

মানিকখালী গ্রামের আব্দুল জলিল ও আতিকুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে আমাদের ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। রান্না ঘর তলিয়ে যাওয়ায় গতকাল রাত থেকে রান্না করতে না পারায় শুকনো খাবার খেয়ে আছি।  

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, গত ৮ আগস্ট মানিকখালি গ্রামের কিছু মানুষ বেড়িবাঁধের কিছু অংশ পানির সংকট নিরসনের জন্য কেটে ফেলেন। পরে স্থানীয় এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড ওই বাঁধ নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করে। উপজেলা কাকচিড়া ইউনিয়নের রাজু মিয়া নামের এক ঠিকাদার মেরামতের কাজ পেয়ে মাটির কাজ শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন পর অজ্ঞাত কারণে মেরামত বন্ধ রাখা হয়। ফলে পানির চাপে আবার ভেঙে যায় বাঁধ।  

নাচনাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মহিউদ্দিন পান্না বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার খবর পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। এরই মধ্যে ছয়টি গ্রাম তলিয়ে গেছে।  

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বিন নুর বলেন, আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে যে বার্তা এসেছে, তাতে বেড়িবাঁধ নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তার কিছু নেই। তবে জলোচ্ছ্বাস যদি বেশি হয় এবং তা যদি বেড়িবাঁধ উপচে পরে তাহলে তো ঝুঁকি আছেই। পাথরঘাটায় প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান বলেন, বেড়িবাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর শুনেছি। তাৎক্ষণিক পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানানো হয়েছে। বৃষ্টি থামলেই তারা এসে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করবেন।  

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। শুকনো খাবারের প্রয়োজন হলে উপজেলা প্রশাসন থেকে সরবরাহ করা হবে।  

নোয়াখালী: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নোয়াখালীতে গত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। জেলায় চলতি মৌসুমে একদিনে এটি সর্বোচ্চ বৃষ্টির রেকর্ড।

এতে উপকূলীয় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর ও চরহাজারী ইউনিয়ন, চরএলাহী ও হাতিয়ার নলচিরা, নিঝুম দ্বীপসহ বিভিন্ন নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি জোয়ারের পানি প্রবাহিত হয়ে বিভিন্ন গ্রাম ব্যাপকভাবে প্লাবিত হওয়ায় পরিস্থিতি দুর্ভোগে রূপ নিয়েছে।

শুক্রবার (৩০ মে) সকালে জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। গভীর নিম্নচাপের কারণে আরও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।

এদিকে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে তীরে। নদ-নদীর পানিও বেড়ে গেছে। জোয়ারের তোড়ে কোম্পানীগঞ্জ ও হাতিয়ার কয়েকটি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্য মাছের ঘের ও পুকুর। ডুবে গেছে ধান, শাকসবজি ও অন্যান্য ফসল। হাতিয়ার মেঘনা নদীতে এমভি প্রাহিম নামে একটি পণ্যবাহী ট্রলার চার কোটি টাকার মালামাল নিয়ে ডুবে গেছে। উপকূলীয় এলাকায় ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত বহাল রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত জোয়ারের পানি ঢুকতে শুরু করেছে নিঝুম দ্বীপের বিভিন্ন এলাকায়। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ ও জাতীয় উদ্যানের বনের হরিণ।

এছাড়া হাতিয়ার চরইশ্বর, নলচিরা, ঢালচর, সুখচর, চরঘাসিয়াসহ বিভিন্ন চরের সড়ক ও বাড়িঘর জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। উপকূলীয় এলাকার মানুষ আতঙ্কিত জোয়ারের অতিরিক্ত পানির ভয়ে।

স্থানীয়রা জানান, গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে নিঝুম দ্বীপে শুক্রবার সকালেও ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। ঝড়ো বাতাস ও সাগর উত্তাল থাকায় তৃতীয় দিনের মতো হাতিয়ার সঙ্গে সারাদেশের নৌ-যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। নিঝুম দ্বীপের নিম্নাঞ্চল জোয়ারের পানিতে ব্যাপকভাবে প্লাবিত হয়েছে। অস্বাভাবিক জোয়ারে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের প্রধান সড়কগুলো প্লাবিত হয়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে নিচু অঞ্চলের বাড়িগুলোতে। বেড়িবাঁধ না থাকায় সহজেই জোয়ারের পানি ঢুকে প্লাবিত হয় নিঝুম দ্বীপ। এতে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন।

অপরদিকে টানা বৃষ্টিতে জেলা শহর মাইজদীর বিভিন্ন এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে। প্লাবিত হয়েছে শহরের ফ্ল্যাট রোড, শিল্পকলা একাডেমির পাশের সড়ক, হাকিম কোয়ার্টার সড়ক। এছাড়া সদর উপজেলাসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছিল না বিদ্যুৎ।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমদ জানান, বৈরী আবহাওয়া মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেড ক্রিসেন্টসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজ করছে।

এদিকে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার সঙ্গে জেলা সদরসহ সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বুধবার (২৮ মে) সকাল ১০টা থেকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশে সব ধরনের নৌ-যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

ভোলা: নিম্নচাপের প্রভাবে ভোলায় নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। এতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি।

মেঘনার পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

মনপুরা, তজুমদ্দিন ও দৌলতখান পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে তলিয়ে গেছে অন্তত ২০টি গ্রাম। এতে পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন হাজারো মানুষ।

অন্যদিকে পানিতে ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। জোয়ারে ভেসে নিখোঁজ রয়েছে শতাধিক গবাদি পশু।

বৈরী আবহাওয়ার কারণে দুদিন ধরে বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার লঞ্চ চলাচল।

অন্যদিকে জেলার বেশিরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা। ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ১১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

ভোলা জেলা প্রশাসক আজাদ জাহান জানান, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এসআই



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews