হৃদয়বিদারক! ভাবতেও কষ্ট হয়। নাসরিন নামে ১৩ বছরের একটি মেয়ে সমবয়সীদের সঙ্গে স্কুলে যেত। স্কুল থেকে ফিরে এক্কাদোক্কা খেলত। বড় হয়ে ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখত।
বিজ্ঞাপন
মায়ের দুঃখ ঘোচানোর ইচ্ছা পোষণ করত। কিন্তু আজ সবই অতীত। এক বখাটের উৎপাত সহ্য করতে না পেরে আত্মঘাতী হয়েছে নাসরিন। একই সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে নাসরিনের সব স্বপ্ন। নাসরিনের মায়ের সব আশা। সারা দেশে প্রতিনিয়ত এমন কত নাসরিনকে আত্মঘাতী হতে হয়, তার খবর কি আমরা রাখি? বখাটেদের হাত থেকে এই শিশু-কিশোরীদের বাঁচাতে আমরা কি পদক্ষেপ নিচ্ছি?
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলায় ঘটনাটি ঘটেছে গত বুধবার রাতে। কাঁঠালিয়া সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী নাসরিন আক্তার (১৩) গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করেছে। নাসরিনের মা চম্পা বেগমের ভাষ্য, একই গ্রামের শাহজালাল আকনের ছেলে সৈকত আকন প্রায়ই তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। বুধবার বিকেলে মেয়েকে ঘরে একা রেখে তিনি বাবার বাড়ি গিয়েছিলেন। রাতে বাড়ি ফিরে দেখতে পান, বারান্দার আড়ার সঙ্গে ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে তাঁর মেয়ে। সে সময় তাঁর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে নাসরিনের মৃতদেহ নামায়। একটি ছোট্ট মেয়ে, যে এখনো নিজের জীবনকে চিনে উঠতে পারেনি, তার এমন করুণ বিদায় সমাজের বিবেকে কতটুকু নাড়া দিতে পেরেছে?
সংবাদপত্রে প্রায় প্রতিদিনই এমন অনেক খবর আসে। কিশোরী শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাওয়া-আসার পথে নিয়মিত বখাটেদের উৎপাতের শিকার হয়। এসবের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেককে প্রাণও দিতে হয়েছে। কিছুদিন আগে সাভারে একজন শিক্ষকের জীবন গেছে মেয়েদের উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদ করতে গিয়ে। এর পরও কি উত্ত্যক্ত করার ঘটনা কমেছে? কমেনি, তার প্রমাণ ঝালকাঠির নাসরিনের আত্মঘাতী হওয়া। সৈকতের বাবার ভাষ্য, তাঁর ছেলে যে কাউকে উত্ত্যক্ত করে তা কেউ তাঁকে জানায়নি। অন্যরা কেন জানাবে? বাবা হিসেবে তাঁর কি কোনো দায়িত্ব নেই ছেলের খবর রাখার? আমাদের মনে রাখতে হবে, অভিভাবকদের উদাসীনতাই সন্তানকে বিপথে ধাবিত করে। বিভিন্ন স্থানে কিশোর অপরাধীদের দল বা কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার খবর পাওয়া যায়। পত্রপত্রিকায় দেখা যায়, এসব কিশোর অপরাধী চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই থেকে শুরু করে খুনখারাবি পর্যন্ত করছে।
নাসরিনের সঙ্গে এর আগে কী কী ঘটেছিল, সেদিন কোনো ঘটনা ঘটেছিল কি না—পূর্বাপর প্রতিটি বিষয় পুলিশকে তদন্ত করে দেখতে হবে। এমন অপরাধের প্রতিবাদে সমাজকে রুখে দাঁড়াতে হবে। তা না হলে কারো কন্যাসন্তানই নিরাপদ থাকবে না। সারা দেশে বখাটেপনার বিরুদ্ধে পুলিশকে বিশেষ অভিযান চালাতে হবে।