দেশে মোট ভোটারের অর্ধেকের বেশি নারী। তাই রাজনীতিতে নারীর ক্ষমতায়ন, দুর্নীতিমুক্ত দেশ গঠন ও গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে জাতীয় নির্বাচনে আরও বেশি নারীকে মনোনয়ন দিতে হবে। পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার পরিবর্তন করে সংসদের অর্ধেক আসনে মনোনয়ন দিতে হবে নারীদের।

মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল আয়োজিত জাতীয় নির্বাচনে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন শীর্ষক এক বহুদলীয় সম্মেলনে রাজনৈতিক দলগুলোর নারীনেত্রী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা এসব কথা বলেন। 

ইউএসএআইডি ও ইউকেএইডের যৌথ অর্থায়নে এসপিএল প্রকল্পের 'নারীর জয়ে সবার জয়' ক্যাম্পেইন এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

মনোনয়নপ্রত্যাশী নারীরা বলেন, দেশে পুরুষ ভোটারের চেয়ে নারী ভোটার বেশি। তাই সংসদ নির্বাচনে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে পুরুষের মানসিকতায় পরিবর্তন আনার তাগিদ দিয়ে নারী নেত্রীরা বলেন, একজন পুরুষ এমপি নির্বাচন করে পরাজিত হলেও তাকে বার বার মনোনয়ন দেওয়া হয়। অথচ নারীদের ক্ষেত্রে ঘটে উল্টোটা। রাজনীতিতে টিকে থাকতে নারীকে দলের বাইরে ও ভেতরে লড়াই করতে হয়। এমনকি নারীকে পিছিয়ে দিতে তার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

নারী নেত্রীরা বলেন, নারীদের এগিয়ে আনার জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা হয়েছিল। এখন সেটি বেড়ে ৫০টি হয়েছে। আসলে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোতে ৩৩ ভাগ নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটা বাস্তবায়নের তাগিদ দেন তারা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান বলেন, নারীর প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। সংসদীয় আসন ও দলীয় বড় পদেও নারীদের বঞ্চিত করা হয়। তিনি বলেন, নারীরা দুর্নীতিমুক্ত ও মেধাবী। মৃত স্বামীর আসনে নয়, তৃণমূলের নারী নেত্রীদের নির্বাচনের সুযোগ দিতে হবে।

আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নারী নেতৃত্ব এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। নারীদের জন্য সংরক্ষিত ৫০ আসন না থাকলে নারীরা আবার পিছিয়ে যাবে। দেশের অর্ধেক নারীকে বাদ দিয়ে এসডিজি অর্জন সম্ভব হবে না। তাই নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াতে সংসদে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদ বলেন, নারীদের পিছিয়ে রাখছে নারী। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় নারীরা অবহেলিত।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শাহিনূর নার্গিস বলেন, নারীদের মনোনয়ন দিলে পুরুষ প্রার্থীর সঙ্গে পারবে না- এমন মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে। নারায়ণগঞ্জের জাতীয় পার্টির নেত্রী অনন্যা হোসাইন মৌসুমী বলেন, দলে নারীদের মূল্যায়ন হয় না। নাটোর-৪ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী কোহেলী চুমকি মুক্তি বলেন, দেশে ৫১ শতাংশ নারী ভোটার। তরুণ ভোটাররাও নারীদের পক্ষে। তাই অর্ধেক আসনে নারীদের মনোনয়ন দিতে হবে।

বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাসাস নেত্রী শায়লা ইসলাম ফরিদপুর-৪ আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চান। তিনি বলেন, মায়ের হাত ধরে রাজনীতিতে এসেছি। মাঠে মানুষের সঙ্গে কাজ করছি। নারীদের নারী না ভেবে মানুষ ভাবা উচিত। জাপা নেত্রী আমিনা হাসান বলেন, নারীরা মনের কথা বলার জায়গা পায় না। নেতারা নারীদের এগিয়ে যেতে দেন না।

ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী সেলিনা জাহান লিটা বলেন, সংরক্ষিত আসনে নয়, তিনি সরাসরি নির্বাচনে অংশ নিয়ে তার যোগ্যতা প্রমাণ করতে চান।

বিএনপি থেকে মানিকগঞ্জ-১ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ফারহানা ইসলাম আতিকা বলেন, মনোনয়ন ফরম কেনার পর তার স্বামীকে ফোন করে বলা হচ্ছে, ভাবী কেন মনোনয়ন ফরম কিনলেন। ভাবির জন্য তো সংরক্ষিত আসন আছে। ভাবি কি ভোটের মাঠে দৌড়াতে পারবেন? বিএনপি নেত্রী শিরিন সুলতানা বলেন, নারীরা এখনও রাজনীতিতে বৈষ্যমের শিকার। জাপা নেত্রী মাসুদা রশিদ চৌধুরী বলেন, নারীদের রাজনৈতিক অবদান মূল্যায়ন করতে হবে এবং সংসদে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে।

ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালের চিফ অব পার্টি কেটি ক্রোক বলেন, সাধারণ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী নারী নেতারা তাদের নির্বাচনী এলাকায় ইতিবাচক ও গঠনমূলক ভূমিকা রেখে চলেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর এখনই সময় সরাসরি নির্বাচনে নারী নেতাদের অংশগ্রহণ বাড়ানো।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews