দীর্ঘ ১৭ বছর পর প্রথমবার মুক্ত পরিবেশে ঈদুল আজহা উদযাপন করছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দল ও জোটের নেতারা। সেজন্য রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের পরিবারে বাড়তি আনন্দ যোগ হচ্ছে। অন্যদিকে, চলতি বছরের ডিসেম্বরেই ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন বিএনপির সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি নবীনরাও। ভোটের বার্তা নিয়ে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন তারা।

অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে বরাবরই বলা হচ্ছে- চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অপরদিকে, বিএনপিসহ অন্যান্য বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের দাবি জোরালোভাবে তুলছে। তারা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ এবং সেই অনুযায়ী রোডম্যাপও চায়। এমতাবস্থায় দেশের সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্প্রতি তারুণ্যের সমাবেশে দলীয় নেতা-কর্মীসহ দেশবাসীকে ডিসেম্বরে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আহ্বান জানিয়েছেন। সেই মোতাবেক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকায় প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। বসে নেই শেখ হাসিনা পতনে যুগপৎ আন্দোলন করা বিএনপির মিত্র ডান-বাম এবং মধ্যপন্থী রাজনৈতিক দলের নেতারাও।

দেশবাসীকে ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এবারের ঈদে বিএনপির বার্তা হলো- নেতাকর্মীরা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঈদ উদযাপন করবেন। বিশেষ করে আগামী ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন ঘিরে অনেক সতর্ক থাকতে হবে। আমাদের কথাবার্তা এবং আচরণে মানুষ যেন কষ্ট না পায়, সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। জনগণের পাশে থাকতে হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, যারা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, তাদের বেশিরভাগই এখন নির্বাচনী বার্তা নিয়ে এলাকামুখী। কেউ কেউ ইতোমধ্যে নিজ নিজ সংসদীয় আসনে জনসংযোগও শুরু করেছেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও ভোটাধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে যারা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন, তাদের পরিবারের পাশে ঈদ উপহারও পৌঁছে দিচ্ছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এ ক্ষেত্রে ‘জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন (জেডআরএফ)’ ও ‘আমরা বিএনপি পরিবার’র মাধ্যমে উপহার দেয়া হচ্ছে।

দলের অনেকে নিজ উদ্যোগে ঈদ উপলক্ষে উপহারসামগ্রী বিতরণ করছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা সাধারণ মানুষসহ কর্মী-সমর্থকদের আরো চাঙা করতে নিজ নির্বাচনী এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন, দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে এলাকায় ব্যাপক প্রচার ও গণসংযোগ চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে ফেলেছেন নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা। এতে ঈদের পাশাপাশি ভোটের আমেজও সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের সময় যুগপৎ আন্দোলন-সংগ্রামের সহযোগীদের সাথেও ঈদে সময় কাটাবেন তারা। বন্যা পূর্বাভাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থেকে সহযোগিতার জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছেন।

জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ঢাকায় গুলশানের ফিরোজায় আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ঈদ উদযাপন করবেন। গত ৬ মে চিকিৎসা শেষে দুই পুত্রবধূ- বড় ছেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ডা: জুবাইদা রহমান ও ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমানের (কোকো) স্ত্রী সৈয়দা শার্মীলা রহমানকে সাথে নিয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফেরেন। ইতোমধ্যে সৈয়দা শার্মীলা রহমান দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমানকে নিয়ে আমেরিকা গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকা থেকে যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হবার কথা রয়েছে ডা. জুবাইদা রহমানের। সেখানে তার জন্য অপেক্ষা করছেন স্বামী তারেক রহমান এবং তাদের একমাত্র মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। তারা এবার যুক্তরাজ্যে ঈদ করবেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর রাজধানী ঢাকার গুলশান আজাদ মসজিদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গুলশান সোসাইটি মসজিদ, মির্জা আব্বাস শাহজানপুর, ড. আব্দুল মঈন খান নরসিংদীর পলাশ, নজরুল ইসলাম খান বনানী ডিওএইচএস মসজিদ, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী চট্টগ্রাম, সালাহ উদ্দিন আহমদ কক্সবাজার, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সিরাজগঞ্জ, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বনানী ও অধ্যাপক ডা: এজেডএম জাহিদ হোসেন ধানমন্ডিতে ঈদের নামাজ আদায় করবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় কেরানীগঞ্জে এবং বেগম সেলিমা রহমান ঢাকার নেতা-কর্মীদের সাথে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ঢাকায় থাকছেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও বেগম সারোয়ারী রহমান গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বাসায় আছেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানান, ঈদের দিন সকালে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির নেতারা। এরপর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসনের সাথে নেতাদের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা রয়েছে।

ঢাকা বিভাগের নেতাদের মধ্যে আবদুস সালাম পিন্টু, ড. আসাদুজ্জামান রিপন, আহমেদ আজম খান, আবদুস সালাম, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আবদুস সালাম আজাদ, মাহাদী আমিন, সাইয়্যেদুল আলম বাবুল, সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, আমিনুল হক, ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন অসীম, নজরুল ইসলাম আজাদ, প্রকৌশলী আশরাফ উদ্দিন বকুল, শেখ রবিউল আলম রবি, অধ্যাপক ড. মোর্শেদ হাসান খান, সাইফুল আলম নীরব, আফরোজা আব্বাস, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, আকরামুল হাসান, তাবিথ আউয়াল, ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, রফিকুল আলম মজনু, তানভীর আহমেদ রবিন, আব্দুল মোনায়েম মুন্না, মোস্তফা জামান, নিপুণ রায় চৌধুরী, মাহমুদুর রহমান সুমন, ডা: দেওয়ান সালাহউদ্দিন বাবু, খন্দকার আবু আশফাক, মামুন হাসান, এসএম জাহাঙ্গীর, এমএ কাইয়ুম, মামুন হাসান নিজ নিজ এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করবেন।

ময়মনসিংহ বিভাগে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শরিফুল আলম, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, ড. রফিকুল ইসলাম হেলালী, ডা: মো: আনোয়ারুল হক, প্রকৌশলী মোস্তফা-ই জামান সেলিম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) একেমএম শামসুজ্জামান, এজমল হোসেন পাইলট, শহীদুল্লাহ ইমরান, সালমান ওমর রুবেল ইদ উপযাপন করবেন।

এ ছাড়া রাজশাহী বিভাগে মিজানুর রহমান মিনু, রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, হারুনুর রশিদ হারুন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আমিরুল ইসলাম খান আলীম, তাইফুল ইসলাম টিপু, ওবায়দুর রহমান চন্দন, ফজলুর রহমান খোকন, অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুল এবং রংপুর বিভাগে আসাদুল হাবিব দুলু, ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, ফরহাদ হোসেন আজাদ, বখতিয়ার আহমেদ কচি, ডা: মো: আবদুস সালাম, মির্জা ফয়সাল আমিন, ডা: মঈনুল হোসেন সাদিক, তাসভীর উল ইসলাম, ড. মিজানুর রহমান মাসুম নিজ নিজ এলাকায় প্রচার চালাবেন।

খুলনা বিভাগে শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, নার্গিস বেগম, রকিবুল ইসলাম বকুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আজীজুল বারী হেলাল, অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, শামীমুর রহমান শামীম, এম এ সালাম, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, মিথুন রায় চৌধুরী, জাকির হোসেন ঈদ উদযাপন করবেন।

চট্টগ্রাম বিভাগে বরকত উল্লাহ বুলু, মো: শাজাহান, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, জয়নুল আবেদীন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, মেয়র ডা: শাহাদত হোসেন, মাহবুবের রহমান শামীম, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, শাকিলা ফারজানা, প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান, সামির কাদের চৌধুরী প্রমুখ।

বরিশালে বিভাগে এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নুরুল ইসলাম মনি, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, জহির উদ্দিন স্বপন, ডা: জিয়াউদ্দিন হায়দার, এবিএম মোশাররফ হোসেন, আকন কুদ্দুসুর রহমান, মো: মুনির হোসেন, নুরুল ইসলাম নয়ন, মাহবুবুল হক নান্নু, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, রাজিব আহসান, সাইফ মাহমুদ জুয়েল, এবং কুমিল্লা বিভাগে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, বিল্লাল হোসেন তারেক প্রমুখ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব নেতারা গত রমজানের ঈদেও নিজ নিজ এলাকায় প্রচার চালিয়েছেন। আসন্ন ঈদুল আজহা সেই নির্বাচনী পালে দিয়েছে বাড়তি হাওয়া। এবারেনা তাদের অনেকেই সাধারণ মানুষের দ্বারে দ্বারে যাবেন বলে জানান।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, গত রোজার ঈদ আমরা মুক্তভাবে উদযাপন করেছি। এবার প্রথমবারের মতো ঈদুল আজহা উৎযাপন করব। আশা করি আগামী ডিসেম্বর নির্বাচন হবে। এর মাঝে আর কোনো ঈদ পাব না। এই ঈদ রাজনীতিবিদের জন্য অবশ্য স্পেশাল।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে নির্বাচন অবশ্যই বড় একটি পরীক্ষা, চ্যালেঞ্জও বটে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সবারই আলাদা পরিকল্পনা থাকে। আমাদের সকল কর্মসূচির মূল ফোকাস হচ্ছে নির্বাচন। তাই আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জনগণের সাথে সেতুবন্ধনের কাজ করবে এবারের ঈদ।

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি সব সময় আমার নির্বাচনী আসন গোবিন্দগঞ্জ -৪ এর মানুষের পাশে আছি, ছিলাম, থাকবো। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে সার্বক্ষণিক গণমানুষের কাছে যাচ্ছি। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে আমার নির্বাচনী আসনের ভোটার, যারা এলাকার বাহিরে থাকেন, সকল নেতাকর্মী ও জনগণের সাথে গণসংযোগ করে যাচ্ছি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews