সাইনাসের প্রকার ও প্রতিকার

আমা দের দেশে অনে কেরই বদ্ধমূল ধারণা আছে, মাথা যন্ত্রণা মানেই সাইনাস হয়েছে। এ ভুল ধারণা ভাঙ্গতে প্রথমেই মনে রাখা দরকার সাইনাস বলে কোনও রোগ নেই। সাইনাস হচ্ছে মুখম-লের অভ্যন্তরে অবস্থিত অস্থিগুলির গহ্বর বা গর্ত। সাইনাস মনে করে যে রোগে অনেকে আক্রান্ত হন তা হচ্ছে সাইনোসাইটিস।

সাইনাস এর প্রকারভেদ : সাইনোসাইটিস এর ফলে রোগীর মুখম-লের বিভিন্ন জায়গায় ব্যাথার সঙ্গে সঙ্গে যন্ত্রণা অনুভূত হয়। মুখম-লের ভেতর ৪ রকম সাইনাস দেখা যায়। ১) কপালের পিছনদিকে অস্থির যে গহ্বর থাকে, তাকে বলা হয় ফ্রন্টাল সাইনাস। ২) মুখের ভেতর অস্থির যে গহ্বর থাকে, তাকে বলা হয় ম্যাক্সিলারি সাইনাস। ৩) চোখ আর নাকের মাঝখানের মৌচাকের মতো যে সাইনাস থাকে, তাকে বলা হয় এথময়েড সাইনাস বা এথময়েড়াল সাইনাস। ৪) আমাদের নাকের ঠিক পিছনে একটি ফাঁকা জায়গা থাকে, তাকে বলা হয় স্ফেনয়েড সাইনাস। সাইনোসাইটিস এর ফলে রোগীর যে কোনও একটি সাইনাস আক্রান্ত হয়। রোগের প্রকোপ বাড়লে ধীরে ধীরে অন্য সাইনাসেও রোগ ছড়িয়ে পড়ে।

সাইনোসাইটিস কী : প্রাপ্তবয়স্ক হবার আগেই সাইনাসগুলি পরিণত হয়ে যায়। সাইনাসে অপ্রয়োজনীয় দূষিত জীবাণুর বৃদ্ধির ফলেই সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে। একিউট ও ক্রনিক দুভাগে সাইনোসাইটিসকে ভাগ করা হয়। একিউট সাইনোসাইটিসে ঘুম থেকে উঠে রোগীর কোনও অসুস্থতা থাকে না। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়। সূর্য ডোবার আগে পর্যন্ত রোগী যন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়ে। কিন্তু সূর্য ডুবে গেলে আর যন্ত্রণা থাকে না। ক্রনিক সাইনোসাইটিসে রোগীর মাথার যন্ত্রণা সেরকম থাকে না। তবে এক্ষেত্রে রোগীর ঘুম থেকে উঠেই কোনও কোনও ক্ষেত্রে মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা সেরে যায়। সাইনোসাইটিস এর ফলে মুখের উপরিভাগে কোনও জায়গায় বেশ ব্যথা হয়। সে জায়গায় আঙ্গুলের চাপ দিলে কোন্ সাইনাস বেশি আক্রান্ত হয়েছে তা সহজেই বোঝা যায়।

সাইনোসাইটিস এর কারণ : সাইনোসাইটিস বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। তবে কারও নাকের হাড় যদি বাঁকা থাকে তাহলে এ রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা বেশি। বিজ্ঞানী চিকিৎসক হানেমান এর যুগান্তকারী আবিষ্কার ক্রনিক মিয়াজম সোরার প্রভাবেই সাইনোসাইটিস বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে হয়ে থাকে। দূষিত পুকুরের জলে ¯œান করলে, স্যাঁতসেতে পরিবেশে দীর্ঘদিন থাকলে, অত্যধিক সিগারেট খাওয়া ছাড়াও নাস্য ব্যবহার করলে সাইনোসাইটিস হয়ে থাকে। নাকের মাধ্যমে রাস্তার ধুলো শরীরে প্রবেশ করলে সাইনোসাইটিস হতে পারে। কম বয়সে অনেকেরই হাম, চিকেনপক্স টনসিল, ইনফ্লুয়েঞ্জা হয়। এসব রোগের জীবাণু যদি পুরোপুরি শরীর থেকে না যায় তা পরবর্তীকালে নাকের পিছনে গিয়ে বাসা বাঁধে। এর ফলে কিছুদিন অন্তর নাক থেকে অনবরত জল পড়তে থাকে, মাঝে মাঝেই মাথা যন্ত্রণা হয়। এ অবস্থার যদি রোগ জিইয়ে রাখা হয় তাহলে পরবর্তীকালে তা ক্রনিক সাইনোসাইটিসে পরিণত হয়। ক্রনিক সাইনোসাইটিস ও যদি জিইয়ে রাখা হয় তাহলে নাকে সব সময় দুর্গন্ধ এবং কখনও কখনও নাক থেকে রক্ত পড়ে। এর থেকে পরবর্তীকালে ফেরিনজাইটিস বঙ্কাইটিস এমনকি আথ্রাইটিসও হতে পারে। এর ফলে চোখেরও ক্ষতি হতে পারে।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান : মনে রাখতে হবে সময়মতো চিকিৎসা এবং সচেতনতাই এ রোগের অন্যতম চিকিৎসা। একিউট বা তীব্র সাইনোসাইটিস সারাতে হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে যাতে এটা ক্রনিক পর্যায়ে না যায়। এ রোগের লক্ষণ অনুযায়ী হোমিওপ্যাথিতে চমৎকার কার্যকরী ওষুধ আছে। যে ওষুধগুলো বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয় তা সংক্ষেপে উল্লেখ করলাম। ১) গ্লোনিয়ন, ২ বেলেডোনা, ৩) সাঙ্গুনেরিয়া, ৪) স্পাইজেলিয়া, ৫) নেট্রামমিউর, ৬) মেড্রোহিনাম, ৭) থুজা, ৮) টিউবারকুলিনাম ৯) সালফার ও ১০) লাইকোপোডিয়াম উল্লেখযোগ্য। তার পরেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ খেতে নেই। কারণ একটা নাম দিয়ে সাধারণভাবে রোগ নিরূপণে হোমিওপ্যাথির তেমন আগ্রহ নেই যেমন রয়েছে রোগীর মধ্যে থেকে রোগ নির্বাচনে। তাই রোগীর রোগের নির্বাচনের জন্য হোমিওপ্যাথি প্রকৃত ওষুধটি নির্বাচনে আগ্রহী।

লেখক : সাবেক অধ্যক্ষ ডা. জাকির হোসেন হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম।



The Post Viewed By: 26 People

The Post Viewed By: 26 People



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews