বিকাশ রঞ্জন দাস। বাংলাদেশ ক্রিকেটের এক বিস্মৃত নাম। অথচ এই নামটি স্মরণীয় হয়ে থাকতে পারতো। তা হয়নি। বিকাশ প্রায় হারিয়ে গিয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেট থেকে। চাকরি করছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে।

২০০০ সালে ভারতের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে খেলতে নামে বাংলাদেশ। সেই ঐতিহাসিক দলের সদস্য ছিলেন বিকাশ। কিন্তু ওই টেস্টটিই তার ক্যারিয়ারের সর্বশেষ টেস্ট। এরপর আর দেশের জার্সি গায়ে দেখা যায়নি তাকে।

এমনকি নেই ‘বিকাশ’ নামটির অস্তিত্বও। ছেলেবেলা থেকেই ইসলাম ধর্মের অনুরাগী ছিলেন বিকাশ। একসময় গ্রহণ করছেন ইসলাম ধর্ম। নতুন নাম হল মাহমুদুল হাসান। এটা ২০০৪ সালের কথা। সেই থেকে বিকাশ হয়ে গেলেন মাহমুদুল। ধীরে ধীরে হারিয়ে যান ক্রিকেট থেকে।

সম্প্রতি সেই নামটি আবার উঠে এসেছে সৌরভ গাঙ্গুলীর কল্যাণে। ২২ নভেম্বর ইডেনে ঐতিহাসিক দিবারাত্রির টেস্টে মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ ও ভারত। সেই টেস্টে গাঙ্গুলী আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টের স্কোয়াডকে। ওই টেস্টটি আবার ছিল অধিনায়ক হিসেবে গাঙ্গুলীর নিজের অভিষেক টেস্ট।

সব মিলিয়ে একটি ঐতিহাসিক টেস্টে আমন্ত্রণ পেয়েছেন আরেকটি ঐতিহাসিক টেস্টের ক্রিকেটাররা। আর এর মধ্যে দিয়েই প্রায় ভুলে যাওয়া ‘বিকাশ’ যার বর্তমান নাম মাহমুদুল হাসান আবার এসেছেন আলোচনায়।

ক্রিকেট থেকে বহুর দূরে কর্পোরেট জীবনে অভ্যস্ত বিকাশ আবার ক্রিকেটে ডাক পেয়ে দারুণ উচ্ছ্বসিত। রক্তে আবার জোয়ার লেগেছে দুরন্ত তারুণ্যের। কাল বিলম্ব না করেই কলকাতা যাওয়ার উদ্যোগ করেন। এরই মধ্যে ভারতের ভিসাও নিশ্চিত হয়ে গেছে তার।

২১ তারিখই কলকাতা যাচ্ছেন মাহমুদুল। সৌরভের সঙ্গে দেখা করার তর সইছে না তার। ভারতের আনন্দ বাজার পত্রিকাকে জানান, ‘২২ তারিখ ইডেন গার্ডেন্সে দেখা হবে দাদার সঙ্গে। ১৯ বছর আগে সৌরভের বিপক্ষে শেষ বার খেলেছি। তার পরে আর দেখা হয়নি ওর সঙ্গে। এবার আবার দেখা হবে। দাদা দারুণ একটা উদ্যোগ নিয়েছে। আমাদের কথা যে ভুলে যাননি, তাতেই প্রমাণিত সৌরভ অনেক বড় মাপের মানুষ।’

মাত্র ১৮ বছর বয়সে বাংলাদেশের জাতীয় দলের জার্সি ওঠে তার গায়ে। তখন ভাবা হয়েছিল, অনেকদূর যাবেন এই ক্রিকেটার। তুলে নিয়েছিলেন ভারতীয় ওপেনার সদগোপন রমেশের উইকেট। কিন্তু এখানেই থেমে গেল সমস্ত সম্ভাবনা। এটিই তার ক্যারিয়ারের একমাত্র আন্তর্জাতিক উইকেট হয়ে থাকল।

সেই উইকেট প্রাপ্তির স্মৃতিও রোমন্থন করলেন আজকের মাহমুদুল, মানে সেদিনের বিকাশ, ‘একটু জোরের উপরেই বলটা রেখেছিলাম। বাড়তি বাউন্সে বল রমেশের ব্যাটে লেগে স্টাম্পে লাগে। একটু পরেই আম্পায়ার স্টিভ বাকনার এগিয়ে এসে আমার হাতে বেলটা তুলে দিয়ে বলেন, এটা যত্ন করে রেখে দিও। এটা তোমার প্রথম টেস্ট উইকেটের স্মৃতি। বেলটা হাতে নিয়ে দেখলাম ভেঙে গিয়েছে।’

সেই বলটি এখনো বিকাশের সংগ্রহে আছে, সযত্নে। কিন্তু এত সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার কী করে হারিয়ে গেলেন? তার উত্তরে জানা গেল করুণ এক গল্প। ইনজুরির কালো থাবা আর কর্তৃপক্ষের অবহেলার কাহিনী। ইনজুরির কালো থাবাই শেষ করে দিয়েছে তার স্বপ্ন।

পিঠের চোট প্রায়শই ভোগাত তাকে। আজকের সময়ের মতো চোট নিয়ে এতটা সচেতনতা ছিল না দেশের ক্রিকেটে। ফলে ইনজুরির কাছে হার মানতে হয় বিকাশকে।

নিজের ক্যারিয়ারের সমাপ্তি কথা জানাতে গিয়ে বিকাশ বলেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেটে টানা বল করে যেতাম। পিঠে ব্যথা অনুভব করতাম। কেউ সে ভাবে আমাকে গাইড করার ছিল না। ওই পিঠের চোটই আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিল।’

এ নিয়ে অভিমানও আছে তার। জানালেন বোর্ড থেকে কোন সহায়তা পাননি তিনি। বিশ্বের অন্য দেশের ক্রিকেটাররা চোটে পড়লে বোর্ড এগিয়ে আসে। কিন্তু বিকাশ নিজ দেশের বোর্ডকে পাশে পাননি। সেই মনোবেদনার কথাও জানালেন তিনি, ‘অস্ট্রেলিয়ায় কমনওয়েলথ ব্যাঙ্ক টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে শচীন টেন্ডুলকার ও অজিত আগারকারের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। পরে জানতে পারি চোট সারানোর জন্য বোর্ড ওদের অস্ট্রেলিয়ায় পাঠিয়েছে। আমিও আমাদের দেশের বোর্ডের শরণাপন্ন হয়েছিলাম। দুঃখের কথা, কোনও সহযোগিতাই পাইনি। তখন ঠিকঠাক সাহায্য পেলে আমাকে হয়তো খেলা ছাড়তে হত না।’

এই অবহেলা ও অভিমান নিয়েই ধীরে ধীরে হারিয়ে গেলেন বিকাশ থেকে মাহমুদুল হয়ে ওঠা এই ক্রিকেটার। হারিয়ে গেল একটি স্বপ্ন ও সম্ভাবনার গল্প।

পিএ





Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews