রামগতিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ রাজনৈতিক দলের লোক বিবেচনায় এমনকি প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে গরমিল রয়েছে এমন ব্যক্তিদের আবেদনপত্রের বৈধতা দিয়ে লটারির নামে আইওয়াশ করে ডিলার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ কমিটির সভাপতি নিজেই এ অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।
এতে কাগজপত্রের বৈধতা ছিল এমন আবেদনকারীরা বঞ্চিত হয়েছেন, আবার কাগজপত্রে গরমিল থাকা ব্যক্তি লটারিতে সুযোগ পেয়ে হয়েছেন ডিলার। এমন অনিয়মের কারণে বৈধ কাগজপত্র থাকা আবেদনকারীদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
এ বিষয়ে ডিলার নিয়োগ কমিটির সভাপতি ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি তেমন কিছু বলতে পারব না। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাই এর ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’
জানা গেছে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে রামগতি উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগের জন্য আবেদন আহ্বান করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়। একই বছরের মার্চ মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ছিল আবেদনের শেষ দিন। তবে এ বিষয়ে হাইকোর্টে মামলা থাকার কারণে গত ২৯ জুলাই ডিলার নিয়োগের দিন ধার্য ছিল। এরই মধ্যে ডিলার নিয়োগ পেতে উপজেলার আটটি ইউনিয়ন থেকে ১৬৯ জন আবেদন করেন। এর মধ্যে ৫৫টি আবেদন বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস বাতিল ঘোষণা করে। ২৯ জুলাই সকালে ১১৪ জন আবেদনকারী নিজেদের লোকজন নিয়ে এসে উপজেলায় জড়ো হন। এ সময় উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ডা. জামাল উদ্দিন ও জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুর রহিমের উপস্থিতিতে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন উপজেলা পরিষদ হলরুমে লটারির মাধ্যমে ৩৯ জন ডিলারের নিয়োগ চূড়ান্ত করেন। আর এ চূড়ান্ত নিয়োগ নিয়েই নানান অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ওঠে।
আরও পড়ুন
আরও পড়ুন শিক্ষা খাতে আসেনি কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন

অভিযোগ রয়েছে, আবেদনের শর্ত পূরণ বা সত্যতা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে প্রশাসন করেছে নানান অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা। আবেদনে স্বাক্ষর নেই, অঙ্গীকার দিয়েছেন ৫০ টাকা মূল্যের স্ট্যাম্পে, চাল সংরক্ষণের গোডাউন নেই, কেউ আবার ভাঙা চা-দোকানকে দেখিয়েছেন গোডাউন হিসাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তারা অনৈতিক সুবিধা নিয়ে এমন ব্যক্তিদের বৈধ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এদিকে ডিলার নিয়োগে অনিয়মের প্রতিকার চেয়ে সংক্ষুব্ধ ও ভুক্তভোগী আবদুল করিম, হান্নান হাওলাদার ও গোলাম কিবরিয়া নামে তিন ব্যক্তি খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলার নিয়োগ কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আমজাদ হোসেন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। ওই অভিযোগে তারা উল্লেখ করেন, উপজেলার চরআলগী ইউনিয়নের সিরাজ চেয়ারম্যানের বাড়ির দরজার কেন্দে র জন্য খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারশিপ পেতে আবেদন করেন তারা। সে প্রেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত করে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। কিন্তু এর মধ্যে মানজুর হোসেন নামে একজনকে ডিলার হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অথচ নিয়োগের পূর্বে তদন্তকারী কর্মকর্তার যাচাই-বাছাইয়ে তার আবেদন অসম্পূর্ণ ও ত্রুটিপূর্ণ ছিল। এরপরও রহস্যজনক কারণে তাকে লটারিতে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এমতাবস্থায় তাকে চূড়ান্ত করে যে ডিলারশিপ দেওয়া হয়েছে তা বাতিলসহ তদন্তকারীর দাখিলকৃত তদন্ত প্রতিবেদন পুনরায় মূল্যায়ন করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে ইউএনওর হন্তক্ষেপ কামনা করেছেন আবেদনকারী ওই তিন ব্যক্তি।
এদিকে, ডিলারশিপপ্রত্যাশী ১৬৯ আবেদনকারীর মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৫৫ জনের আবেদন বাতিল ঘোষণা করার পর ১১৪ জনের আবেদনপত্র যাচাই-বাছাই করে ইউএনও বরাবর ৪৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন জমা দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত তিন কর্মকর্তা। এর মধ্যে উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মুহাম্মদ ফারুক হোসেনের দেওয়া প্রতিবেদনের একাংশের একটিমাত্র পৃষ্ঠার ১৭ থেকে ২৪ নম্বর ক্রমিকে মাত্র আটজনের মধ্যে চারজনেরই আবেদন অযোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়। এরপরও ওই চারজনকে লটারিতে অন্তর্ভুক্ত করেন কমিটির সভাপতি ইউএনওসহ অন্যরা।
এ বিষয়ে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাহফজুর রহমান বলেন, ‘আসলে কে কত টাকার স্ট্যাম্পে ঘর ভাড়ার চুক্তিনামা করেছেন সেটা আমরা আমলে নেইনি। এছাড়া কারও সই আছে কিনা সে বিষয়ে কমিটি আছে, তারা সবাই মিলে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আমি সেই মোতাবেক সই করে দিয়েছি।’