ভূপৃষ্ঠে আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে ক্রমাগত। কিন্তু জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে খাদ্যশস্যের চাহিদা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অনেকে বলে থাকেন, এভাবে চলতে থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাত পৃথিবীতে তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দেবে। তবে সবাই এই মতের সঙ্গে ঐকমত্য নন; বিশেষত যারা বিকল্প উপায়ে চাষাবাদের কথা ভাবছেন, তারা। বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যেই হাইড্রোপনিকস, অ্যাকোয়াপনিকস ইত্যাদি নানা বিকল্প বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। যেখানে মাটি ছাড়াই শুধু পানির সাহায্যে ফসল উৎপাদন করা যায়।

কিন্তু অনেকে পানির কাছেও আটকে থাকতে চান না, তারা আরেক ধাপ এগিয়ে শুধু বাতাসের সাহায্যে ফসল উৎপাদন করতে চান। আর সেই পথের একজন অগ্রনায়ক নাইজিরিয়ার বিজ্ঞানী স্যামসন অগবলি। তিনি নিজ দেশের সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কট মেটাতে দীর্ঘদিন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। নাইজিরিয়ার বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১৯ কোটি; যা ক্রমাগতভাবে আরও বাড়ছে।  ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রশাসন’ এর ভাষ্য মতে, আফ্রিকার এই দেশটিতে জনসংখ্যার অনুপাতে ইতোমধ্যেই প্রায় ৭ কোটি ৮৫ লক্ষ হেক্টর আবাদি জমির অভাব রয়েছে। নাইজিরিয়ায় বর্তমানে আবাদি ভূমির পরিমাণ মাত্র ৩ কোটি হেক্টর। 

এই পরিসংখ্যান তরুণ বিজ্ঞানী স্যামসন অগবলিকে ভীষণভাবে ভাবিয়ে তোলে। তাই জন্মভূমির আসন্ন সঙ্কট থেকে নিজেকে ও দেশের জনগণকে রক্ষার জন্য তিনি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে ওঠেন। ছোটবেলায় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও মানব সেবার তাগিদে নেমে পড়েন কৃষি কাজে। ২০১৪ সাল থেকে তিনি চাষাবাদের বিভিন্ন বিকল্প উপায় নিয়ে কাজ শুরু করেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে তিনি গড়ে তুলেন ‘পিএস নিউট্রাসিউটিক্যালস’ নামের একটি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এখন পর্যন্ত তিনি নিরবচ্ছিন্নভাবে কৃষিখাত উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তার প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, কৃষিখাতে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ও খাদ্যের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি। 

তার সেই সাধনা বিফলে যায়নি। দীর্ঘদিনের গবেষণার মধ্য দিয়ে তিনি একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যে উপনীত হন। চাষাবাদ পদ্ধতির নতুন একটি ধারা সূচনা করেন, যার নাম অ্যারোপনিক্স। এই পদ্ধতিতে মাটির সাহায্য ছাড়াই বাতাসের সাহায্যে ফসল উৎপাদন করা যায়। তার এই উদ্ভাবন বিশ্বব্যাপী তীব্র আগ্রহের সঞ্চার করেছে। তবে এই পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন কার্যক্রম তিনিই সর্বপ্রথম হাতে নেননি।

এই পদ্ধতির বহুমুখী সুবিধা বিশ্ববাসী ভোগ করতে পারবেন বলে বিশ্বাস অবগলির। এর ফলে, কৃষকরা নানামুখী সঙ্কট থেকে মুক্তি পাবেন। কৃষকদের সবচেয়ে বেশি ভয় থাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ তথা ঘূর্ণিঝড়, বন্যা ইত্যাদির কারণে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়া নিয়ে। অ্যারোপনিক্স সেই ঝামেলা থেকে কৃষকদের মুক্তি দেবে।

অগবলি জানান, নাইজিরিয়ার মাত্র ৪৬ শতাংশ মাটি ফসল উৎপাদনের উপযোগী। তিনি মনে করেন, এখনই যদি তার দেশ ভবিষ্যৎ খাদ্য নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী কোনো পরিকল্পনা না করে, তাহলে এর পরিণতি হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। তার বিশ্বাস, ভবিষ্যতের যুদ্ধ হবে কৃষিক্ষেত্র দখলকে কেন্দ্র করে।

বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির ক্রমাগত উন্নয়ন এখনো কৃষিখাতে ততটা প্রভাব ফেলতে পারেনি। কিন্তু খুব বেশিদিন এভাবে কৃষিখাত টিকে থাকতে পারবে না বলে মনে করেন স্যামসন অগবলি। তার মতে, বিভিন্ন কারণে কৃষিখাতে প্রযুক্তির সর্বাত্মক ব্যবহার অনিবার্য হয়ে পড়েছে। বিশেষত, প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কৃষি ব্যবস্থাপনায় আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত ও স্মার্ট যুবক-যুবতীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। এছাড়া খাদ্য উৎপাদনের কার্যকাল কমিয়ে আনবে এবং অধিক ফসল ফলাতে সাহায্য করবে। 

এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের জন্য নির্দিষ্ট জায়গায় প্লান্ট স্থাপন করা হয়। সেই প্ল্যান্টের মধ্যে ফসল উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানে বীজ বপন করা হয়। ফসল বাড়তে থাকলে সেই প্লান্টের বাতাসের মধ্যে শিকড় ছড়ায় এবং বাতাস থেকে প্রয়োজনীয় শক্তি সংগ্রহ করতে থাকে। এভাবে খুব স্বল্প সময়ে অধিক পরিমাণ ফসল উৎপাদন করা যায়। দেখুন স্যামসন অগবলির নিচের ভিডিওটি-

তরুণ বিজ্ঞানী স্যামসন অগবলির বর্তমান বয়স ৩৭ বছর। তার জন্ম নাইজিরিয়ার আবাদান শহরে। দেশটির ইগাবিনিদিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাণরসায়ন বিদ্যায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন শেষে এখন একই বিশ্ববিদ্যলয়ে পিএইচডিতে গবেষণারত আছেন। ইতোমধ্যেই তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন। তার বর্তমান লক্ষ্য, এই গবেষণাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এবং সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কট থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা। তিনি বলেন, পৃথিবীর ভবিষ্যৎ অর্থনীতি নিয়ন্ত্রিত হবে গুটিকয়েক মানুষের দ্বারা, যাদের উজ্জ্বল ও ব্যতিক্রমী ‘আইডিয়া’ আছে। টাকা সকল সমস্যার সমাধান করতে পারবে না- ‘আইডিয়া’ সকল সমস্যার সমাধান করবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews