প্লাস্টিক বর্জ্যের ভয়াবহতা

প্লাস্টিক এক অপূর্ব আবিষ্কার। একইসঙ্গে প্লাস্টিক এক ভয়ংকর আবিষ্কার। অত্যন্ত স্বল্পমূল্যের এমন এক বস্তু প্লাস্টিক, যাহা অপচ্য। কচ্ছপ প্রজাতির মতো ইহার আয়ুষ্কাল কমপক্ষে ৫০০ বত্সর। কিন্তু আমরা প্লাস্টিকের একটি বোতলে পানি খাইয়া কিংবা প্যাকেটের খাবার খাইয়া ওই বোতল বা প্যাকেটটির তাত্ক্ষণিক প্রয়োজন শেষ করিয়া ফেলি। কিন্তু তাহার পর? তাহার পর প্লাস্টিকের প্যাকেটটির আশ্রয় হয় ডাস্টবিনে কিংবা পথেঘাটে। উহার সামান্য অংশই রিসাইকেল হয়। বেশিরভাগ প্লাস্টিকের শেষাবধি ঠাঁই হয় বর্জ্য হিসাবে প্রকৃতিতে।

প্রকৃতিতে প্রতিনিয়তই চলিতেছে বিস্ময়কর এক চক্রের খেলা। এইখানে সকল কিছুই ঘুরিয়া ফিরিয়া আসে। অপচ্য প্লাস্টিক প্রকৃতিতে মিশিয়া ভাঙিয়া যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায়। প্লাস্টিকের এই ক্ষুদ্র কণা মাইক্রোপ্লাস্টিক নামে পরিচিত। মাইক্রোপ্লাস্টিক খাদ্যচক্রে প্রবেশ করিয়া শেষ গন্তব্য হিসাবে ঢুকিতেছে মানুষের শরীরে। কিন্তু কতখানি ঢুকিতেছে? সুপারসনিক গতিতে আগাইতেছে আধুনিক পৃথিবী। প্লাস্টিক মানি তথা ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড ছাড়া আধুনিক জীবন কল্পনাই করা যায় না। কিন্তু আমরা জানিই না যে, প্রতি সপ্তাহেই আমরা অন্তত আস্ত একখানি ক্রেডিট কার্ড খাইয়া ফেলিতেছি। খাইয়া নিশ্চয়ই তৃপ্তির ঢেকুরও তুলিতেছি। কারণ, সুস্বাদু এবং নিত্যদিনের খাবারের সঙ্গেই গ্রহণ করিতেছি এই পরিমাণ প্লাস্টিক। এই তথ্য জানাইয়াছে অস্ট্রেলিয়ার নিউক্যাসল ইউনিভার্সিটির একদল গবেষক। গবেষণায় বলা হইয়াছে, আমরা সপ্তাহে ৫ গ্রাম পর্যন্ত প্লাস্টিক খাই, যাহা দিয়া বানানো যাইবে একটি আস্ত ক্রেডিটকার্ড! গবেষকরা বলিতেছেন, আমরা যেই প্লাস্টিক খাই তাহার সবচাইতে বড় উত্স হইল খাওয়ার পানি। ইহার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ উত্স হইল মাছ। গবেষণায় দেখা গিয়াছে পৃথিবীর সব ধরনের জলাশয়ে এত বেশি প্লাস্টিক বর্জ্য মিশিয়াছে যে, তাহার টুকরো টুকরো কণা প্রতিনিয়তই গিলিতেছে সকল প্রজাতির মাছ। আর এই সকল মাছ খাইয়া পরোক্ষভাবে প্লাস্টিকও খাইয়া ফেলিতেছি আমরা। তাহা হইলে আমাদের উপায় কী? বিগত বিশ বত্সরে বিশ্বে প্লাস্টিকের উত্পাদন সবচাইতে বেশি বৃদ্ধি পাইয়াছে। এইসকল প্লাস্টিকের সিংহভাগই ছড়াইয়া পড়ে প্রকৃতিতে। শুধু পানি হইতেই মানুষ গড়ে প্রতি সপ্তাহে ১ হাজার ৭৬৯ পার্টিকেল প্লাস্টিক খায়। স্থানভেদে ইহার উনিশ-বিশ তারতম্য হয় মাত্র। তাহা ছাড়া প্রতিবার খাবারের সহিত অন্তত ১০০টি করিয়া প্লাস্টিক তন্তু খাইতেছি আমরা। এইসকল প্লাস্টিক কণা প্রতিনিয়তই আমাদের শরীরে ঢুকিয়া ছড়াইয়া পড়িতেছে রক্তনালিতে। আর রক্তপ্রবাহের সঙ্গে তাহা ছড়াইয়া পড়িতেছে যকৃত, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয় ও অন্ত্রের ভিতরে। ইহা জানাইয়াছে ব্রিটেনের হ্যারিয়ট-ওয়াট বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা।

দুঃখের সহিত বলিতে হয়, বিশ্বে প্রতিবত্সর ৩৩ কোটি টনের বেশি প্লাস্টিক উত্পাদিত হইতেছে। ইউএন এনভায়রনমেন্টের তথ্য অনুযায়ী, বত্সরে ৮০ লক্ষ টনের বেশি প্লাস্টিক সমুদ্রে পড়িতেছে। এই মাত্রা অব্যাহত থাকিলে ২০৫০ সাল নাগাদ সমুদ্রে মাছের চাইতে প্লাস্টিকের পরিমাণ বেশি হইবে। আর আমরাও ক্রমশ প্লাস্টিক ম্যানে রূপান্তরিত হইব। অমৃত প্লাস্টিক খাইয়া এই জগত্ ক্রমশ মৃত হইতে থাকিবে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews