৯৫. সে (জুলকারনাইন) বলল, আমার প্রতিপালক আমাকে এ বিষয়ে যে ক্ষমতা দিয়েছেন, তা-ই উৎকৃষ্ট। সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য করো। আমি তোমাদের ও তাদের মধ্যস্থলে এক মজবুত প্রাচীর গড়ে দেব। (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৯৫)

তাফসির : ইয়াজুজ-মাজুজের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য লোকেরা বাদশাহ জুলকারনাইনের কাছে প্রাচীর নির্মাণের আবেদন করেছিল। তারা এর জন্য অর্থকড়ি দিতে চেয়েছিল। এ বিষয়ে আগের আয়াতে বর্ণনা ছিল। আলোচ্য আয়াতের মূল বক্তব্য হলো, বাদশাহ জুলকারনাইন তাদের অর্থকড়ি গ্রহণ করেননি। তবে তিনি তাদের কাছে দৈহিক শ্রম চেয়েছেন। তিনি বলেছেন, মহান আল্লাহ আমাকে যা দান করেছেন, তা-ই আমার জন্য উত্কৃষ্ট। আমার অর্থকড়ির কোনো প্রয়োজন নেই। অবশেষে বাদশাহ জুলকারনাইন নিজের অর্থ ও স্থানীয় লোকদের শ্রমে একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন নির্মাণ করেছেন। কিন্তু এ প্রাচীর কোথায় অবস্থিত, তা নিয়ে অকাট্য কোনো সিদ্ধান্ত এখনো কেউ দিতে পারেনি।

আব্বাসীয় খলিফা ওয়াসিক বিল্লাহ কর্তৃক জুলকারনাইনের প্রাচীর পর্যবেক্ষণের জন্য একটি দল প্রেরণ করা হয়েছিল। পর্যবেক্ষণ শেষে তাদের ফিরে আসার কথা আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) ‘আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। সেখানে রয়েছে যে এই প্রাচীর লৌহ নির্মিত। এতে বড় বড় তালাবদ্ধ দরজাও আছে এবং এটি উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত। তাফসিরে কাবির ও তাফসিরে তাবারিতেও এ ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে রয়েছে যে এটি সমরখন্দের বিপরীত দিকে অবস্থিত। (তাফসিরে কাবির : ৫/৫১)

আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি (রহ.) ‘আকিদাতুল ইসলাম ফি হায়াতি ঈসা (আ.)’ গ্রন্থে ইয়াজুজ-মাজুজ ও জুলকারনাইনের প্রাচীরের অবস্থা প্রসঙ্গক্রমে বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণনা অনুসন্ধানের মাপকাঠিতে উত্কৃষ্ট পর্যায়ের। তিনি বলেন, দুষ্কৃতকারী ও বর্বর মানুষদের লুণ্ঠন থেকে আত্মরক্ষার জন্য পৃথিবীতে এক নয়—বহু জায়গায় প্রাচীর নির্মাণ করা হয়েছে। এগুলো বিভিন্ন বাদশাহ বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করেছেন। তন্মধ্যে সর্ববৃহৎ ও সর্বপ্রসিদ্ধ হলো চীনের প্রাচীর। এর দৈর্ঘ্য আবু হাইয়্যান আন্দালুসি এক হাজার ২০০ মাইল বর্ণনা করেছেন। আবু হাইয়্যান ইরানের শাহি দরবারের ইতিহাসবিদ ছিলেন। তাঁর মতে, এই প্রাচীরের প্রতিষ্ঠাতা চীন সম্রাট ‘ফগফুর’। এর নির্মাণের তারিখ আদম (আ.)-এর অবতরণের তিন হাজার ৪৬০ বছর পর বর্ণনা করা হয়। এই চীনের প্রাচীরকে মোগলরা ‘আনকুদাহ’ এবং তুর্কিরা ‘বুরকুরকা’ বলে থাকে। তিনি আরো বলেন, এমন আরো কয়েকটি প্রাচীর বিভিন্ন স্থানে পরিদৃষ্ট হয়।

শায়খ মারাগি লিখেছেন, ইয়াজুজ-মাজুজের মহাপ্রাচীর কোনো কোনো ইতিহাসবিদ খ্রিস্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দীতে স্বচক্ষে দেখেছেন। এটি ‘বলখ’ শহরে অবস্থিত। তার নাম ‘বাবুল হাদিদ’। এটি ‘তিরমিজ’-এর নিকটবর্তী। (তাফসিরুল মারাগি : ১৬/১৩-১৫)

গ্রন্থনা : মুফতি কাসেম শরীফ



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews