আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, আইনি সহায়তা কার্যক্রম আরও বেগবান করতে হলে লিগ্যাল এইডকে অবশ্যই জনগণের দোরগোড়ায় নিয়ে যেতে হবে। ইউনিয়ন ও উপজেলা লিগ্যাল এইড কমিটিকে অধিকতর কার্যকর করতে হবে, কারাগারগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে। তাহলেই এর সুফল পাওয়া যাবে।
রোববার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি পদ্ধতি’ বা এডিআর মামলাজট নিরসনের সহায়ক একটি পন্থা হিসেবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। জার্মান সরকারের উন্নয়ন সংস্থা- জিআইজেড এর সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ৮৭ ভাগ মানুষ স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তিতে আগ্রহী এবং শতকরা ৩০ ভাগ নাগরিকের প্রাথমিক দ্বন্দ্বের কারণ প্রতিবেশীর সঙ্গে ছোট-খাটো বিরোধ বা মারামারি যা স্থানীয়ভাবেই নিষ্পত্তিযোগ্য। তিনি বলেন, এটি খুবই আশার কথা হলেও আমাদের স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধ নিষ্পত্তির হার অতি নগণ্য। এর মূল কারণ সামাজিক পরিবর্তন, সামাজিক উন্নয়ন, মানুষের ব্যস্ততা এবং মধ্যস্থতাকারীর প্রতি আস্থার অভাব।
২০১৫ থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৮৩৬টি বিরোধ নিষ্পত্তি হয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, লিগ্যাল এইড মানুষের আস্থার প্রতীকে পরিণত হওয়ায় এই নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়েছে। এই আস্থা আমাদের মজবুত করে ধরে রাখতে হবে।
আনিসুল হক বলেন, গরীব ও অসহায় মানুষকে আইনগত সহায়তা পাওয়ার সঙ্গে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সামাজিক সমতা জড়িত। আর্থিকভাবে অসচ্ছল যে কোনো নাগরিক আইনগত সহায়তা পাবেন, এটাই স্বাভাবিক। তিনি বলেন, আইনগত সহায়তা পাওয়া তার প্রতি করুণা নয় বরং এটা তার অধিকার। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সংবিধানেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক সুবিচার ও সমতার বিধানাবলি সন্নিবেশ করে গেছেন।
তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর দীর্ঘ ২১ বছর আর্থিকভাবে অসচ্ছল মানুষের আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকারের প্রতি কেউ দৃষ্টি দেয়নি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমবার সরকার গঠন করেই ২০০০ সালে ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’ প্রণয়ন করেন। ফলে বাংলাদেশে প্রথম রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় অসচ্ছল ও সহায়-সম্বলহীন নাগরিকদের আইনগত অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আইনগত সহায়তার বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ স্বপ্রণোদিত, দ্রুত ও কার্যকর আইনিসেবা নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রত্যেক লিগ্যাল এইড কমিটি, লিগ্যাল এইড অফিসার ও প্যানেল আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংস্থার পরিচালক (সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ) মোহাম্মদ আল মামুন। অনুষ্ঠানে দুজনকে সেরা লিগ্যাল এইড অফিসার ও প্যানেল আইনজীবী হিসেবে পুরস্কৃত করা হয়।