তুর্কি শহর ইস্তাম্বুলে শান্তি আলোচনার মাধ্যমে ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক বন্দি বিনিময়ের দ্বিতীয় পর্বও সম্পন্ন হয়েছে। শুক্র ও শনিবারের এ ঘটনার রেশ না কাটতেই ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। যাতে অন্তত ১৩ জন নিহত হয়েছেন এবং ইউক্রেনজুড়ে বহু মানুষ আহত হয়েছেন। 

শনিবার সন্ধ্যায় মার্কিন সংবাদ মাধ্যম সিএনএনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইউক্রেনের বিমানবাহিনী জানিয়েছে, রাশিয়া শুক্রবার রাতে ১৪টি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ২৫০টি আক্রমণাত্মক ড্রোন নিক্ষেপ করে হামলা চালিয়েছে, যার মূল লক্ষ্য ছিল কিয়েভ। এর মধ্যে ৬টি ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২৪৫টি ড্রোন প্রতিহত করা সম্ভব হলেও রাজধানীসহ দেনেপ্রো, ওডেসা, খারকিভ, দোনেৎস্ক ও জাপোরিঝিয়া অঞ্চলে বিস্ফোরণ ঘটে।

কিয়েভের মেয়র ভিতালি ক্লিচকো জানান, বিস্ফোরণে বহু আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং শহরজুড়ে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

সংসদ সদস্য কিরা রুডিক সিএনএন-কে বলেন, ‘পুরো রাত আমরা সিঁড়ির নিচে আশ্রয়ে ছিলাম। চারপাশে শুধু বিস্ফোরণ আর আগুন, যেন সাক্ষাৎ প্রলয়’।

সিএনএন-এর দাবি অনুযায়ী, দোনেৎস্কে ৪ জন, খেরসন ও ওডেসায় ৫ জন এবং খারকিভে ৪ জন নিহত হয়েছেন।

তবে এ হামলায় এখন পর্যন্ত ১৫ জন আহতের খবর দিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান। 

রাশিয়ার পাল্টা দাবি:

এদিকে পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, তারা ইউক্রেনের ৯৪টি ড্রোন ধ্বংস করেছে, যা মূলত বেলগোরোদ ও ব্রিয়ানস্ক অঞ্চলের ওপর দিয়ে আসছিল। আরও কিছু ড্রোন ধরা পড়ে কুরস্ক, লিপেটস্ক, ভোরোনেজ এবং তুলা অঞ্চলে।

তুলা অঞ্চলের গভর্নর দিমিত্রি মিলিয়ায়েভ জানান, সেখানে তিনজন আহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুজন হাসপাতালে ভর্তি।

বন্দি বিনিময়ের ঐতিহাসিক মুহূর্ত

এদিকে নৃশংস এই হামলার মধ্যেই ইউক্রেন ও রাশিয়া দুই ধাপে মোট ১,৪০০’র বেশি বন্দি বিনিময় করেছে। ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর এটাই সবচেয়ে বড় বন্দি বিনিময়।

শনিবার দ্বিতীয় ধাপে মুক্তি পায় আরও ৬০০ সৈন্য। এর আগে শুক্রবার প্রথম ধাপে মুক্তি পেয়েছিল প্রায় ৮০০ জন।

ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, মুক্তিপ্রাপ্ত ইউক্রেনীয় সৈন্যরা মাথা কামানো অবস্থায় ইউক্রেনের পতাকায় জড়ানো, কেউ কেউ ফোনে বাড়িতে কথা বলছে, কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ছে।

পটভূমিতে ইস্তাম্বুল বৈঠক

গত সপ্তাহে ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এই বন্দি বিনিময় চুক্তির সিদ্ধান্ত হয়। মূলত এই বৈঠকটি ছিল রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগের এক বিরল মুহূর্ত। যদিও সেখানে যুদ্ধবিরতির কোনো অগ্রগতি হয়নি। ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা রাশিয়াকে ‘তাৎক্ষণিক ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি’র আহ্বান জানালেও মস্কো তা মেনে নেয়নি এবং কোনো শান্তি প্রস্তাবও পাঠায়নি।

মূলত একদিকে যুদ্ধের তাণ্ডব, অন্যদিকে মানবিক বন্দি বিনিময়ের স্বস্তি—ইউক্রেন যুদ্ধের বাস্তবতা যেন আরও দ্বান্দ্বিক হয়ে উঠছে। তবে রাশিয়ার সাম্প্রতিক হামলা আবারও স্মরণ করিয়ে দিল, শান্তির পথে এখনো বহু বন্ধুর পথ বাকি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews