আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ - ০৬:১৩ | প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার ২২ মার্চ ২০১৮ | প্রিন্ট সংস্করণ

যে কোনো মানুষই মানবজাতির অংশ। আর কুষ্ঠিনামা তালাশ করলে দেখা যাবে সব মানুষেরই আদি পিতা হযরত আদম (আঃ)। অতএব আদম সন্তান হিসেবে সব মানুষেরই মিলেমিশে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করার কথা। বর্ণ, ভাষা বা সম্প্রদায়গত পার্থক্যের কারণে মানুষে-মানুষে হিংসা-বিদ্বেষ বা সংঘাত চলতে পারে না। বরং এই পার্থক্যকে বৈচিত্র্য ও সৌন্দর্যের দৃষ্টিতে বিবেচনা করা প্রয়োজন। এমন দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করলে বৈচিত্র্যের ঐক্য সৃষ্টি হতে পারে এবং মানুষের সমাজ এগিয়ে যেতে পারে শান্তি ও প্রগতির পথে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, বর্তমান সভ্যতায় বৈচিত্র্যের ঐক্য চেতনা যেন লোপ পেতে বসেছে। উন্নত বিশ্বেও এই সংকটের ঘনীভূত রূপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
গত ১৬ মার্চ দ্য সান পরিবেশিত খবরে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের নাটিংহামে ১০ বৃটিশ নারীর হামলার শিকার এক মিসরীয় কিশোরী গত বুধবার মারা গেছেন। ১৮ বছর বয়সী মারিয়ামের পরিবার ইন্টারনেটে একটি ভিডিও পোস্ট করেছে। তাতে দেখা যায়, নাটিংহামের একটি বিপণিবিতান থেকে ফেরার সময় পাবলিক বাসে ১০ বৃটিশ নারী কিশোরী মারিয়ামের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমে তারা মারিয়ামকে পেটাতে শুরু করে। এরপর লাথি ও ঘুষি মারতে থাকলে সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ওই বৃটিশ নারীরা তার পিছু ধাওয়া করে প্রহার অব্যাহত রাখে। সে ওই নারীদের কাউকে চিনতো না। এরপর গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু মারাত্মক আঘাতের কারণে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের পরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মারিয়ামকে চিকিৎসা না দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেয়। মস্তিষ্কে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণেই তার মৃত্যু হয়েছে। এদিকে মারিয়ামের মা নিসরিন অভিযোগ করেন, বর্ণবাদ ও বৈষম্যের ওপর ভিত্তি করে তার মেয়ের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। নারীরা তাকে ধাওয়া করলে সে একটি বাসে উঠে চালককে অনুরোধ জানায় যাতে তিনি বাসটি ছেড়ে দেন। কারণ ধেয়ে আসা নারীরা তাকে মেরে ফেলবে। কিন্তু বাস চালক তার কথা শোনেনি। ফলে তাকে প্রহারে প্রহারে প্রাণ হারাতে হলো।
বর্ণবাদী উগ্র বৃটিশ মহিলাদের হামলায় মেধাবী ছাত্রী মারিয়াম পৃথিবী থেকে বিদায় নিল। এই কিশোরীর কী অপরাধ ছিল? মারিয়ামতো বৃটেনে এসেছিলো পড়াশোনা করতে। স্বপ্ন ছিল প্রকৌশলী হবে। এসব তো কোন অপরাধের বিষয় হতে পারে না। তার কলেজের ভাইস-প্রিন্সিপাল ইউলটান মেলর মারিয়ামের প্রশংসা করে বলেন, বেঁচে থাকলে সে সফল ক্যারিয়ারের অধিকারী হতে পারতো। মুসলিম পরিচয়টাই তার মৃত্যুর কারণ হলো। বিভিন্ন দেশে মুসলমানরা এখন অব্যাহতভাবে বর্ণবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার শিকার হচ্ছে। এর কি কোনো সুরাহা নেই?
বর্তমান বিশ্বব্যবস্থা আসলে সুরাহার বিশ্বব্যবস্থা নয়। সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সাত বছর পূর্ণ হয়েছে। ৮ম বর্ষে পদার্পণ উপলক্ষে জাতিসংঘ তদন্ত কমিশন গত ১৫ মার্চ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘ তদন্তকারী দল সিরিয়ার সরকারি বাহিনী ও অন্যান্য যৌথ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে দেশটির বিরোধী পক্ষের নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতন চালানোর অভিযোগ এনেছে। প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সিরিয়া যুদ্ধে সরকারবিরোধী সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ ও শিশুদের ওপর যে হারে নিপীড়ন চলছে তাকে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের এক নগ্নচিত্র বলা যেতে পারে। এদিকে ২০১৭ সালে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার প্রায় এক তৃতীয়াংশ আবাসস্থল এবং অর্ধেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও চিকিৎসা কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে। উপলব্ধি করা যায় যে, বিগত মাসগুলোতে এই ধ্বংসের হার আরো বেড়ে গেছে।
১৬ মার্চ ইউএসএ টুডে পরিবেশিত খবরে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে চলমান সিরীয় গৃহযুদ্ধে সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন আরো কয়েক লাখ মানুষ। প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ এক সময় সংঘাতে রূপ নেয়। টানা সাত বছর ধরে এই সংঘাত চলছে। শতাব্দীর অন্যতম ভয়াবহ গৃহযুদ্ধে পরিণত হয়েছে সিরিয়া সংঘাত। মৃত্যুর মিছিল থামছেই না। দীর্ঘদিনের এই সংঘাতের কারণে জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে সিরিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল। জঙ্গিরা বিভিন্ন স্থান দখল করে বেসামরিক নাগরিকদের জীবনযাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের নাজেহাল করেছে। যুদ্ধ ও সংঘাতের কারণে বহু মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি হারিয়েছে। ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বেশি শরণার্থী সংকট তৈরি হয়েছে। উল্লেখ্য যে, অর্থনৈতিক সমস্যা ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হওয়ায় আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে বিক্ষুব্ধ জনগণ আন্দোলন শুরু করেছিল। নির্মম পরিহাস হলো, জনগণের আন্দোলন বৃহৎ শক্তিবর্গের হস্তক্ষেপের কারণে যৌক্তিক পরিণতি লাভ করতে পারেনি।
বাস্তবতা হলো, সিরিয়া সংকটের সুরাহার বদলে বৃহৎ শক্তিবর্গ আপন-আপন অর্থনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক স্বার্থে সংকটকে শুধু জটিলই করেনি, সুরাহার পথও বন্ধ করে রেখেছে। ফলে বিমান হামলা, অস্ত্রের ঝংকার ও নানামুখী আঘাতে সিরিয়া বসবাসের অনুপোযোগী একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। বাঁচার তাগিদে জনগণ অভিবাসী হয়েছে, সাগরে ডুবে মরেছে। তবুও সিরিয়া সংকটের সুরাহা হলো না। বর্তমান সভ্যতায় মুসলিম দেশগুলো এভাবেই ধ্বংস হচ্ছে। ওরা যুদ্ধ শুরু করায়, ইন্ধন দেয়, কিন্তু থামায় না আর।
ক্ষমতাবানদের চাতুর্য ও প্রতাপ স্বদেশেও লক্ষ্য করা যায়। সম্পত্তি নিয়ে বিবাদ-বিসংবাদের খবর কোন নতুন বিষয় নয়। তবে এবার পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে বিপদে পড়েছেন যশোর বিএএস শাহীন কলেজের শিক্ষক কাজী লুৎফুন্নেসা। তাঁর জমি দখল করে যশোর পুলিশ সুপারের বাসভবনের সীমানা প্রাচীর উঠছে। কিশোর ছেলেকে কোন অভিযোগে ফাঁসানো হয় কিনা এই ভয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করতে ভয় পাচ্ছেন এই নারী শিক্ষিকা।
১৭ মার্চ মুদ্রিত প্রথম আলোর প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, যশোর শহরে কমপক্ষে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। বিমানবন্দর সড়কে কাজী লুৎফুন্নেসার জমি ছাড়াও শহরের গাড়িখানা সড়কে ১০টি দোকান ও ৩১টি পরিবার উচ্ছেদ করে জমি দখল করেছে পুলিশ। আর জেলা পরিষদের জায়গায় দোকান বরাদ্দ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছিল যশোর পুলিশ।
মানুষের জমি দখলের কাজ তো পুলিশের সাথে মানায় না। বরং এটি অপরাধমূলক কাজ। এদিকে শহরবাসী অনেকে এবং ভুক্তভোগীরা বলছেন, যশোর পুলিশের এসব কর্মকা-ের প্রতিবাদ করলে মিথ্যা মামলায় জড়ানো হচ্ছে। যশোর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, “সাধারণ  মানুষ যে সব অভিযোগ করছে তা মিথ্যা নয়।” অভিযোগের তির মূলত পুলিশ সুপার আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২০১৪ সালে তিনি এই জেলায় বদলি হয়ে আসেন। পুলিশ যা করছে তা পুলিশ সুপারের ইচ্ছাতেই হচ্ছে বলে মানুষের অভিযোগ। এসব অভিযোগের ব্যাপারে পুলিশ সুপারের বক্তব্য জানতে এক সপ্তাহ ধরে নানাভাবে চেষ্টা করা হয়। সর্বশেষ তিনি প্রথম আলোর কাছে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
লুৎফুন্নেসার প্রতিবেশী এক মহিলা প্রথম আলোকে বলেন, “আপা এই শহরের সম্মানীয় ব্যক্তি। তিনি এই পাড়াতেই মানুষ হয়েছেন। শহরে তার বহু ছাত্রছাত্রী। খুব খারাপ লাগে যখন দেখি আপার আব্বা-আম্মার কবরও এসপি সাহেবের বাংলোর মধ্যে পড়ে যাচ্ছে।” আর লুৎফুন্নেসা প্রথম আলোকে বলেন, “এসপি আমারই ছাত্র। আমি বহুবার তার সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছি, অপেক্ষা করেছি। এসপি কথা বলেননি। অন্যদের মাধ্যমে চেষ্টা করেছি, লাভ হয়নি। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছি।”
ভুক্তভোগী লুৎফুন্নেসার আবেদনের কোন সুরাহা হয় কিনা তা দেখার মতো একটি বিষয়। আমরা তো জানি, পুলিশের কর্তব্য হলো দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় লক্ষ্য করা যাচ্ছে বিপরীত চিত্র। এখানে পুলিশের আচরণে শিষ্টজনের অধিকার রক্ষিত হচ্ছে না। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বারবার যোগাযোগ করা হলেও এসপি মহোদয় ঘটনার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে রাজি হলেন না। তা হলে রহস্যটা কোথায়? কোন যৌক্তিক বক্তব্য থাকলে এসপি মহোদয় তা ব্যক্ত করতে পারেন। এতে হয়তো পুলিশের ইমেজ ক্ষুণœ হবে না। ঘটনার ব্যাপারে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews