মানুষ স্বভাবতই নৈতিক। কারণ জৈবিক প্রবণতার পাশাপাশি মানুষের রয়েছে বৌদ্ধিক প্রবণতা, যা বিবেকের প্রতিনিধিত্ব করে, ন্যায়-অন্যায় বোধ জাগ্রত করে। মানুষের ইচ্ছালব্ধ প্রবণতা যখন নেতিবাচক কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তখন হয় 'পাপ'। 'পাপ' ও 'অপরাধ' এক নয়। যে পাপ সমাজের বিরুদ্ধে করা হয় এবং যার জন্য রাষ্ট্র দণ্ড দেয় তা-ই 'অপরাধ'। এই অর্থে 'ধর্ষণ' এক জঘন্যতম 'অপরাধ'। আর যদি হয় 'শিশু ধর্ষণ', তবে ঘৃণা প্রকাশের শব্দ নির্ধারণও কঠিন হয়ে পড়ে। ভাবতে হবে, নৈতিক স্খলনের কত নিম্নস্তরে অবস্থান করছি আমরা। 'শিশু ধর্ষণ' কথাটি ভাবতেই মন লজ্জায়-কষ্টে মুষড়ে যায়। অথচ শিশু ধর্ষণ ও হত্যা যেন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ৭ জুলাই খবরের কাগজে প্রকাশিত ৭ বছরের শিশু সায়মা ধর্ষণ ও হত্যার খবরটি এক ঝটকায় নিজের ওই বয়সী মেয়েটির মুখ মনে করিয়ে দিল। প্রচণ্ড খারাপ লাগা নিয়ে ভয়ে আতঙ্কিত হলাম- স্কুলে, কোচিংয়ে পড়তে গিয়ে কিংবা নিজ বাসায় আমার মেয়েটা নিরাপদে, সুস্থভাবে থাকবে তো? নুসরাত বিভীষিকা কাটতে না কাটতেই সায়মাসহ আরও দুই শিশু (৬ ও ৭ বছরের) ধর্ষণ। পত্রিকার পাতায় সব ঘটনা তো খবর হয়ে আসে না। কত ঘটনাই তো গভীর ক্ষত আর নীরব চোখের জলে চাপা পড়ে যায় পারিবারিক আর সামাজিক সম্মান রক্ষার্থে। গণ্ডিবদ্ধ শহুরে জীবন আর পড়ালেখার ব্যাপক চাপে শিশুদের বাধাহীন আনন্দময় শৈশব আমরা দিতে তো পারছিই না, উপরন্তু খেলতে গিয়ে ফিরতে হচ্ছে ধর্ষিত লাশ হয়ে। সায়মা আকাশ দেখতে ছাদে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু নিজেই জ্বলজ্বলে নক্ষত্র হয়ে রয়েছে আকাশজুড়ে। দূরবর্তী আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষীরা সতর্ক করে 'মেয়েকে সাবধানে রেখো, কারও ডাকে কোথাও যেন একা না যায়, এমনকি শিক্ষক ডাকলেও না।' একজন সুস্থ-স্বাভাবিক শিশুকে যদি আশপাশের সবার সম্পর্কে ক্রমাগত সাবধান করতে থাকি তাহলে কী হবে ওর মানসিক অবস্থা? মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় বলে, একটা ভীতসন্ত্রস্ত ব্যক্তিত্ব তৈরি হবে শিশুটির, যার স্বাভাবিক শৈশব জীবন বলে কিছুই থাকবে না। কৌতূহলী শিশুমন নিয়ে ৭ বছরের মেয়ে আমার পত্রিকা পড়ে বিস্মিত চোখে প্রশ্ন করে- 'মা, ধর্ষণ কী? মেয়েটাকে মেরে ফেলল কেন?' উত্তর দিতে কণ্ঠ রুদ্ধ হয়।

কানাডাপ্রবাসী এক বন্ধু কথাচ্ছলে বলল, বাংলাদেশের পত্রিকা পড়লে ধর্ষণের খবরে শরীর গুলিয়ে ওঠে। ভাগ্যিস, মেয়েদের নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে আসতে পেরেছিলাম। টনটনে দেশাত্মবোধ নিয়ে তাকে বলি, কেন সে দেশে কি সামাজিক অপরাধ হয় না? সে আরও তীব্রতায় বলল, তা নয়, তবে অন্যায়ের বিচার হয় চোখের পলকেই, এটাই শান্তি। এবার কণ্ঠস্বর ম্রিয়মাণ হলো আমার। ১০ জুলাই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ধর্ষণবিষয়ক পরিসংখ্যান চোখের সামনে স্পষ্ট হলো। ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে শিশু ধর্ষণ ৬৩০টি, ধর্ষণজনিত হত্যা ২১টি। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে ৩শ'র কিছু বেশি। যার অধিকাংশ নিষ্পত্তির কিংবা সাজা হওয়ার সঠিক হিসাব জানা যায়নি। বর্তমান অধঃপতিত সামাজিক বাস্তবতায় প্রয়োজন দ্রুত অপরাধ প্রবণতা রুখে দেওয়া। তাই অবিলম্বে শিশু-কিশোরদের স্মার্টফোনসহ অন্যান্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের বয়সভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আইনের আওতায় বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা। সাধারণ মানুষ অন্যায় রুখতে রাষ্ট্রীয় আইনের শক্তিশালী আশ্রয় প্রার্থনা করে। এর অভাবেই আজ সাধারণের প্রতিবাদের ভাষাও দুর্বল। তাই রাষ্ট্র তথা সরকারকেই শক্তি ও ভরসার জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সন্তান যেন থাকে নিরাপদ পরিবেশে।


সহকারী অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ সরকারি এমএম সিটি কলেজ, খুলনা

মানুষ স্বভাবতই নৈতিক। কারণ জৈবিক প্রবণতার পাশাপাশি মানুষের রয়েছে বৌদ্ধিক প্রবণতা, যা বিবেকের প্রতিনিধিত্ব করে, ন্যায়-অন্যায় বোধ জাগ্রত করে। মানুষের ইচ্ছালব্ধ প্রবণতা যখন নেতিবাচক কাজের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, তখন হয় 'পাপ'। 'পাপ' ও 'অপরাধ' এক নয়। যে পাপ সমাজের বিরুদ্ধে করা হয় এবং যার জন্য রাষ্ট্র দণ্ড দেয় তা-ই 'অপরাধ'। এই অর্থে 'ধর্ষণ' এক জঘন্যতম 'অপরাধ'। আর যদি হয় 'শিশু ধর্ষণ', তবে ঘৃণা প্রকাশের শব্দ নির্ধারণও কঠিন হয়ে পড়ে। ভাবতে হবে, নৈতিক স্খলনের কত নিম্নস্তরে অবস্থান করছি আমরা। 'শিশু ধর্ষণ' কথাটি ভাবতেই মন লজ্জায়-কষ্টে মুষড়ে যায়। অথচ শিশু ধর্ষণ ও হত্যা যেন নৈমিত্তিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে। ৭ জুলাই খবরের কাগজে প্রকাশিত ৭ বছরের শিশু সায়মা ধর্ষণ ও হত্যার খবরটি এক ঝটকায় নিজের ওই বয়সী মেয়েটির মুখ মনে করিয়ে দিল। প্রচণ্ড খারাপ লাগা নিয়ে ভয়ে আতঙ্কিত হলাম- স্কুলে, কোচিংয়ে পড়তে গিয়ে কিংবা নিজ বাসায় আমার মেয়েটা নিরাপদে, সুস্থভাবে থাকবে তো? নুসরাত বিভীষিকা কাটতে না কাটতেই সায়মাসহ আরও দুই শিশু (৬ ও ৭ বছরের) ধর্ষণ। পত্রিকার পাতায় সব ঘটনা তো খবর হয়ে আসে না। কত ঘটনাই তো গভীর ক্ষত আর নীরব চোখের জলে চাপা পড়ে যায় পারিবারিক আর সামাজিক সম্মান রক্ষার্থে। গণ্ডিবদ্ধ শহুরে জীবন আর পড়ালেখার ব্যাপক চাপে শিশুদের বাধাহীন আনন্দময় শৈশব আমরা দিতে তো পারছিই না, উপরন্তু খেলতে গিয়ে ফিরতে হচ্ছে ধর্ষিত লাশ হয়ে। সায়মা আকাশ দেখতে ছাদে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু নিজেই জ্বলজ্বলে নক্ষত্র হয়ে রয়েছে আকাশজুড়ে। দূরবর্তী আত্মীয়, শুভাকাঙ্ক্ষীরা সতর্ক করে 'মেয়েকে সাবধানে রেখো, কারও ডাকে কোথাও যেন একা না যায়, এমনকি শিক্ষক ডাকলেও না।' একজন সুস্থ-স্বাভাবিক শিশুকে যদি আশপাশের সবার সম্পর্কে ক্রমাগত সাবধান করতে থাকি তাহলে কী হবে ওর মানসিক অবস্থা? মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যায় বলে, একটা ভীতসন্ত্রস্ত ব্যক্তিত্ব তৈরি হবে শিশুটির, যার স্বাভাবিক শৈশব জীবন বলে কিছুই থাকবে না। কৌতূহলী শিশুমন নিয়ে ৭ বছরের মেয়ে আমার পত্রিকা পড়ে বিস্মিত চোখে প্রশ্ন করে- 'মা, ধর্ষণ কী? মেয়েটাকে মেরে ফেলল কেন?' উত্তর দিতে কণ্ঠ রুদ্ধ হয়।কানাডাপ্রবাসী এক বন্ধু কথাচ্ছলে বলল, বাংলাদেশের পত্রিকা পড়লে ধর্ষণের খবরে শরীর গুলিয়ে ওঠে। ভাগ্যিস, মেয়েদের নিয়ে দেশ ছেড়ে চলে আসতে পেরেছিলাম। টনটনে দেশাত্মবোধ নিয়ে তাকে বলি, কেন সে দেশে কি সামাজিক অপরাধ হয় না? সে আরও তীব্রতায় বলল, তা নয়, তবে অন্যায়ের বিচার হয় চোখের পলকেই, এটাই শান্তি। এবার কণ্ঠস্বর ম্রিয়মাণ হলো আমার। ১০ জুলাই বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ধর্ষণবিষয়ক পরিসংখ্যান চোখের সামনে স্পষ্ট হলো। ২০১৯ সালের প্রথম ছয় মাসে শিশু ধর্ষণ ৬৩০টি, ধর্ষণজনিত হত্যা ২১টি। এ বিষয়ে মামলা হয়েছে ৩শ'র কিছু বেশি। যার অধিকাংশ নিষ্পত্তির কিংবা সাজা হওয়ার সঠিক হিসাব জানা যায়নি। বর্তমান অধঃপতিত সামাজিক বাস্তবতায় প্রয়োজন দ্রুত অপরাধ প্রবণতা রুখে দেওয়া। তাই অবিলম্বে শিশু-কিশোরদের স্মার্টফোনসহ অন্যান্য প্রযুক্তির অবাধ ব্যবহারের বয়সভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আইনের আওতায় বিচারাধীন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি ও অপরাধীর শাস্তি নিশ্চিত করা। সাধারণ মানুষ অন্যায় রুখতে রাষ্ট্রীয় আইনের শক্তিশালী আশ্রয় প্রার্থনা করে। এর অভাবেই আজ সাধারণের প্রতিবাদের ভাষাও দুর্বল। তাই রাষ্ট্র তথা সরকারকেই শক্তি ও ভরসার জায়গাটি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের সন্তান যেন থাকে নিরাপদ পরিবেশে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews