নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় এক আইনজীবীকে বাসা থেকে ডেকে এনে মারধর করে পুলিশে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার পৌর শহরের আরামবাগ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শনিবার বিকালে ওই আইনজীবীকে একটি রাজনৈতিক মামলায় সন্দেহভাজন আসামি করে পুলিশ গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। আদালত তাকে শনিবার সন্ধ্যায় কারাগারে পাঠিয়েছেন।
কারাগারে যাওয়া আইনজীবীর নাম সঞ্জিত কুমার পণ্ডিত। তিনি উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর বাঘমারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি নেত্রকোনা জেলা জজ কোর্টের আইনজীবী।
ভুক্তভোগীর স্বজনদের দাবি, সঞ্জিত কোনো রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো রাজনৈতিক মামলাও নেই। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে হওয়া একটি মামলার বাদীর ওকালতনামায় স্বাক্ষর করায় তাকে মারধর করে পুলিশে দেওয়া হয়।
নেত্রকোনার কোর্ট পরিদর্শক মফিজ উদ্দিন শেখ বলেন, ‘সঞ্জিতকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার শামসের আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’ আদালত সূত্র জানা গেছে, সঞ্জিতের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি।
স্থানীয় ও পুলিশ জানা গেছে, গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পৌর শহরের আরামবাগ এলাকার বাসায় অবস্থান করছিলেন সঞ্জিত। এ সময় বেশ কয়েকজন বিএনপির নেতাকর্মী মামলার কথা বলে তাকে ডেকে আনেন। পরে তাকে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তাকে ‘ফ্যাসিস্টের দোসর’ আখ্যা দিয়ে পুলিশে দেওয়া। পরে পুলিশ তাকে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য মো. রফিকুল ইসলাম হিলালীর বাসায় ভাঙচুরের ঘটনায় হওয়া মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখায়।
২০২৩ সালের ৮ নভেম্বর রফিকুল ইসলাম হিলালীর বাসায় ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। গত ২৫ সেপ্টেম্বর এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম হিলালীর ব্যক্তিগত গাড়িচালক জামাল উদ্দিন বাদী হয়ে মামলা করেন। এতে সাবেক সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিলসহ ৯৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। অজ্ঞাত আসামি করা হয় আরও ৪০০ জনকে।
সঞ্জিতের স্বজনেরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সঙ্গে আইন পেশায় নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। কখনও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত হননি। তার বিরুদ্ধে থানায় কোনো রাজনৈতিক মামলাও নেই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আইনজীবী সঞ্জিত কুমারকে আমাদের দলীয় লোকজন মারধর করেনি। এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুয়া, মিথ্যা ও বানোয়াট। তাকে কে বা কারা মারধর করে পুলিশে দিয়েছে তা আমার জানা নেই।’
কেন্দুয়া থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আইনজীবী সঞ্জিতকে জেলা বিএনপির সদস্য সচিবের বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের মামলায় সন্দেহভাজন আসামি হিসেবে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘আইনজীবী সঞ্জিতকে মারধর করে পুলিশে দেওয়া এবং গ্রেফতার দেখানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে কেউ আমাকে জানায়নি। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’