চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন স্বপন
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে এক ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে পেটানোর অভিযোগে ৪নং মাওহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। গত বুধবার রাতে মামলাটি দায়ের করেন ওই ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী ভূমি কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক। তিনি গৌরীপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্র ও পুলিশ জানায়, মাওহা ইউনিয়নের করমড়িয়া গ্রামের এক নারী গত বুধবার বিকেলে মাওহা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিজের জমির খাজনা পরিশোধ করতে যান। এ সময় ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. আজিজুল হক ওই নারীর কাছ থেকে খাজনা বাবদ ১ হাজার ৬৭০ টাকা আদায় করেন। এর কিছুক্ষণ পর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন স্বপন ভূমি অফিসে গিয়ে ওই নারী খাজনার টাকার পরিমান কমানোর কথা বলেন।
কিন্তু টাকা কমানোর কোনো বিধান নেই বললে চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ নিয়ে দুইজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন অফিসের ভেতরে ঢুকে ভূমি কর্মকর্তা আজিজুলকে চেয়ার থেকে টেনে-হিচঁড়ে বাহিরে বের করে আনার চেষ্টা করেন। কিন্তু কোনো মতেই আজিজুল বের হতে চাচ্ছিলেন না। এ সময় চেয়ারম্যানের সঙ্গে থাকা ইন্তাজ আলী ও হাবিবুর রহমান লাথি ও কিল-ঘুষি দিয়ে মারতে মারতে বাহিরে বের করে পেটাতে থাকেন। এই অবস্থায় উপস্থিত লোকজন গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আজিজুল হক জানান, ওই নারীর খাজনা নিয়মের ভেতরেই ধার্য করা হয়েছিল। কিন্তু টাকা কমানোর দাবি করলে তা নিয়মে নাই বললে তিনি (নারী) চেয়ারম্যানকে গিয়ে উল্টাপাল্টা নালিশ করেন। পরে চেয়ারম্যান কিছু না বুঝে অফিসে ঢুকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে কিল-ঘুষি মেরে শার্টের কলারে ধরে বেদম পিটায়। পরে আরো ৬/৭ জন মিলে হামলা চালিয়ে আহত করে।
অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন বলেন, উনি একজন গাঁজাখোর ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা। বেশ কিছুদিন ধরে তাঁর বিরুদ্ধে ইউনিয়নের লোকজন বিভিন্ন অভিযোগ করে আসছিলেন। ঘটনার দিন একজন নারীর খাজনা বাবদ বেশি টাকা আদায় করলে তিনি শুধু প্রতিবাদ করেন। মারপিটের ঘটনা ঘটেনি। তাছাড়া তিনি জানান, ৩০০ টাকা খাজনার জায়গায় গরিব মানুষের কাছ থেকে সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা নেওয়ারও নজির আছে। উদারণ হিসেবে তিনি ওই ইউনিয়নের বীর আহম্মেদপুর গ্রামের আলী আকবর ও আহসান উল্লাহ নামে দুই ব্যক্তির খাতা তুলে ধরেন। তাঁদের কাছ থেকে ফোনে জানতে চাইলে তাঁরা স্বীকার করেন।
গৌরীপুর থানার ওসি দেলোয়ার আহম্মদ জানান, মারধরের ঘটনা ও সরকারি কাজে বাধার অভিযোগে চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিনসহ ৭ জনকে অভিযুক্ত করে মামলা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও দুই সাংবাদিককে লাঞ্ছনার অভিযোগ এবং স্থানীয় দুই যুবককে আটক করে নির্যাতন করার ছবি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় চেয়ারম্যান রমিজ উদ্দিন ব্যাপক আলোচনায় আসে ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়।