এ বছর ধানের ভালো ফলন ও বেশি দাম পাওয়ায় খুশি রাজশাহীর বোরো চাষিরা। বিঘাপ্রতি ২৪ থেকে ২৫ মণ ধানের ফলন পেয়েছেন তারা। কৃষি অফিসের ভাষ্যমতে, বাম্পার ফলন হয়েছে বোরো ধানে। বাজারে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এবার রাজশাহী জেলায় বোরো ধানের চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা জমি থেকে মাড়াইয়ের পরে দুই বার রোদে শুকিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে। যা বিগত বছরের তুলনায় বেশি। ফলন ও দাম ভালো হওয়ায় বেশ খুশি চাষিরা। শুক্রবার সর্বশেষ তথ্যমতে, রাজশাহী জেলায় ২৫ শতাংশের বেশি ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলেছেন।

জানা গেছে, ফলন ভালো হলেও এখনও ৭০ থেকে ৭৫ শতাংশ ধান চাষিদের জমিতেই রয়েছে। অনেকের জমির ধান আধাপাকা অবস্থায় রয়েছে। এ বছর বৈশাখ মাস চলে গেলেও তেমন ঝড়-বৃষ্টি হয়নি। কয়েকটি উপজেলায় হালকা শিলাবৃষ্টিপাত হয়েছে। যার ফলে তেমন ক্ষতি হয়নি ধানে। তবে এই সপ্তাহে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি হলে ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন চাষিরা।

রাজশাহী জেলায় ২৫ শতাংশের বেশি ধান কেটে কৃষকরা ঘরে তুলেছেন





রাজশাহীর তানোরে ধানতৈড় গ্রামের কৃষক আফসার আলী দুই বিঘা জমির ধান মাড়াই করে ৪০ মণ ফলন পেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘যারা নিজস্ব জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন তাদের প্রতি বিঘায় ২০ হাজার এবং যারা লিজ নেওয়া জমিতে চাষাবাদ করেছেন তাদের খরচ হবে ২৫ হাজার টাকা। তবে যাদের সেচ ব্যবস্থা ভালো না, তাদের আরও বেশি টাকা খরচ হয়েছে।’

আব্দুস সালাম নামে একজন চাষি জানান, তার এক বিঘা জমিতে ২৫ মণ ধানের ফলন হয়েছে। সেই হিসাবে সর্বোচ্চ ধানের ফলন হয়েছে তার জমিতে। আশা করছেন, আবহাওয়া ভালো থাকলে তার আরও সাত বিঘা জমির ধান কাটা সম্পন্ন হবে তিন দিনের মধ্যে। এক সপ্তাহের মধ্যে তিনি সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘শুনেছি আড়তে বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা মণ দরে।’

ধানকাটা শ্রমিক আক্তার হোসেন বলেন, ‘এক বিঘা জমির ধান কাটতে চার জন শ্রমিক লাগে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে যেসব ধান জমিতে পড়ে গেছে সেগুলোতে পাঁচ থেকে ছয় জন শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে। আবহাওয়া ভালো থাকলেও ভ্যাপসা গরমের কারণে জমিতে টেকা যাচ্ছে না।’ 

রাজশাহী জেলার শুধু সমতল ভূমিতে নয়, বরাবরের মতো এ বছর পদ্মার চরে বোরো ধানের চাষ হয়েছে এক হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে। জেলার পবা, গোদাগাড়ী ও বাঘা উপজেলার পদ্মার নদীর চরে বোরো ধানের চাষ করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে পবায় ৮৩৭ হেক্টর, গোদাগাড়ীতে ৮০০ হেক্টর ও বাঘায় ১২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষ করা হয়েছে। চাষিদের ভাষ্য, চরেও ভালো ফলন হয়েছে বোরো ধানের।’

রাজশাহীর পবা উপজেলার চরখিদিরপুর ও ১০ নম্বর চরে পদ্মা নদীর বিস্তীর্ণ এলাকায় এবার বোরো ধানের চাষ হয়েছে। পদ্মার চরের চাষি মিরশাদ আলী সাড়ে তিন বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘পলিপড়া জমিতে বেশি কিছু দেওয়া লাগে না। এবার ভালো ধান হয়েছে। তবে এই জমির কোনও নিশ্চয়তাই নেই। এ বছর ধান হচ্ছে, সামনের বার হয়তো দেখা যাবে এখানেও গভীর পানি।’

গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের চাষি ও সাবেক ইউপি সদস্য ওসমান গনি বলেন, ‘এই চরে যারা ধান চাষ করেছেন, তাদের ফলন ভালো হয়েছে।’

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, ‘এবার জেলায় মোট বোরো চাষ হয়েছে ৬৮ হাজার ২৯৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে পদ্মা নদীর চরে চাষ করা হয়েছে এক হাজার ৭৬২ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে চাষিরা ২৫ শতাংশ ধান ঘরে তুলেছেন। তাতে ফলন হয়েছে ২৪ থেকে ২৫ মণ। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। চাষিরা বাজারে প্রতিমণ বোরো ধান বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। যা বিগত বছরের চেয়ে বেশি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা বারবার চাষিদের বলছি, পাকা ধান কেটে নিতে। বৃষ্টি হলে সমস্যা হবে না। তবে শিলাবৃষ্টি হলে ধানের ক্ষতি হবে। তাই পাকা ধান মাঠে না রাখার বিষয়ে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews