খুনের পর অনুপমের ঘর থেকে কিছুই খোয়া যায়নি। টাকাপয়সা, সোনা গয়না সব কিছুই তার নির্দিষ্ট জায়গাতেই ছিল। এমনকী অনুপমের বিয়ের আংটিও আঙুল থেকে খুলে তাঁর দেহের পাশে ফেলে যায় খুনি। তবে এত কিছুর মধ্যে রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে গিয়েছিল অনুপমের তিনটি মোবাইল ফোন। একটি ফোন অনুপম খুনের অন্যতম অভিযুক্ত তথা মনুয়ার প্রেমিক অজিত ওরফে ব্লেজার কালুর কাছ থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বাকি দুটির কোনও খোঁজ এখনও মেলেনি। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এত দামি জিনিস থাকতে শুধু মোবাইলগুলি কেন নিয়েছিল অজিত? তদন্তের স্বার্থে এবিষয়ে যদিও এখনই মুখ খুলতে নারাজ পুলিশকর্তারা। তবে পুলিশেরই এক বিশ্বস্ত সূত্রে খবর, কী কারণে খুন, সেই রহস্যটাই লুকিয়ে রয়েছে অনুপমের ওই তিনটি ফোনের একটিতে। মনুয়া কোনওমতেই সে তথ্য প্রকাশ্যে আসতে দিতে চায়নি। তাই তার নির্দেশেই খুনের পর ওই ফোনগুলি সরিয়ে নেয় অজিত। কী এমন তথ্য ছিল সেই ফোনে?

আর সে তথ্য প্রকাশ্যে এলে, তাতে কী বা এসে যেত মনুয়ার। পুলিশ বলছে, এই তথ্য ফাঁস হয়ে গেলে, নিজের পরিবারের কাছেই আর মুখ দেখাতে পারত না মনুয়া। সে কারণেই অনুপমকে খুন করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিল সে। অনুপমের ওই মোবাইলে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য ছিল যে, খুনের ফুল প্রুফ প্ল্যানিং করেও আশ্বস্ত হতে পারেনি মনুয়া। খুন হয়েছে কি না সেটা নিজের কানে না শোনা পর্যন্ত স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারেনি সে। প্রতিদিন দুপুরে স্বামীর অনুপস্থিতিতে স্কুটির পিছনে নিত্যনতুন পুরুষ সঙ্গী নিয়ে ফাঁকা বাড়িতে ঢুকত মনুয়া। একথা জানিয়েছেন অনুপমের প্রতিবেশীরা। মনুয়ার ঘনিষ্ঠদের থেকে জানা যায়, একসঙ্গে একাধিক ছেলের সঙ্গে ফ্লার্ট করত সে। দিনরাত শুধু ফোনে কথা আর চ্যাট। নিজের উত্তেজক সেলফিও পাঠাত সেই বয়ফ্রেন্ডদের।

তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, মনুয়ার কিছু অর্ধনগ্ন, উত্তেজক সেলফি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। আর তারই মধ্যে কয়েকটি ছবি চলে আসে অনুপমের হাতে। স্ত্রী-র আপত্তিকর ছবি অন্যের থেকে পাওয়ার পর আকাশ ভেঙে পড়ে অনুপমের মাথায়। এই নিয়ে দু’জনের মধ্যে ব্যাপক বচসা হয়। অজিতের সঙ্গে সম্পর্কের কথা না জানলেও তার বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক থাকার কথা আন্দাজ করতে পারেন অনুপম। বিষয়টি মনুয়ার বাবা-মায়ের কাছে জানানোর সিদ্ধান্ত নেন তিনি। যদিও সে ছবি তাঁদের দেখাননি অনুপম। শুধু স্ত্রীর বেলাগাম জীবনযাত্রার বিষয়ে নালিশ করেন। এবং মনুয়াকে শেষবারের মতো সতর্ক করে দেন। দ্বিতীয়বার এই ধরনের ঘটনা ঘটলে সেই ছবিগুলি মনুয়ার পরিবারের সবাইকে দেখিয়ে দেবেন বলে চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন অনুপম। সেই তিক্ত সত্য যাতে সামনে না আসে, তার জন্যই খুনের ষড়যন্ত্র সাজায় মনুয়া।

উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিজিত্‍ বন্দ্যোপাধ্যায়কে এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, একটি ফোন উদ্ধার করা হয়েছে। বাকি দুটি ফোনের খোঁজে তল্লাশি চলছে। এই ফোনে কী রহস্য লুকিয়ে আছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনও উত্তর দিতে রাজি হননি। তাঁর বক্তব্য, এতে তদন্ত প্রক্রিয়ার ক্ষতি হতে পারে। পুলিশকে মনুয়া আগাগোড়া মিথ্যা কথা বলে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছে। জেরায় সে পুলিশকে বলেছিল, অনুপম তার নাচ এবং চাকরির বিরোধিতা করেন। তবে সব্যসাচী দাস ওরফে বুবাই নামে মনুয়ার এক আত্মীয়র থেকে জানা যায়, সে তথ্য মিথ্যা।

গত ৩ মে সকালে মনুয়ার ফোন পেয়ে সে-ই গিয়ে অনুপমের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পায়। সব্যসাচীর দাবি, অনুপমদা মনুয়াকে সব সময় নাচের জন্য উৎসাহ দিত। নিজে রাত পর্যন্ত জেগে থেকে রিহার্সালে সঙ্গ দিত। এমনকী যখন যেমন টাকা লাগত সবই অনুপমদা দিত। কেউ বিরোধিতা করলে এত কিছু করে? মনুয়া পড়শোনা করতে চেয়েছিল বলে নিজেই বিএড কলেজে তাকে ভর্তি করিয়েছিল। একথা স্বীকার করেছেন মনুয়া এবং অনুপমের অন্যান্য ঘনিষ্ঠরাও। তাই খুনের জন্য মনুয়া যে অত্যাচার এবং স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের তথ্য দিচ্ছে, তার সত্যতা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে তদন্তকারীদের মধ্যেই। তাই অনুপমের বাকি মোবাইলগুলি পাওয়া গেলে রহস্যের কিনারা হবে বলে মত তদন্তকারীদের একাংশের।



Contact
reader@banginews.com

Bangi News app আপনাকে দিবে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতা যা আপনি কাগজের সংবাদপত্রে পাবেন না। আপনি শুধু খবর পড়বেন তাই নয়, আপনি পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে উপভোগও করবেন। বিশ্বাস না হলে আজই ডাউনলোড করুন। এটি সম্পূর্ণ ফ্রি।

Follow @banginews